আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ভিভো বাংলাদেশের মার্কেটে অন্যতম জনপ্রিয় একটি মোবাইল ব্র্যান্ড। ভিভোর মোবাইল ফোন গুলো সুন্দর ডিজাইন এবং ভালো ক্যামেরার জন্য বিখ্যাত।
ভিভো y 36 Unboxing and overview দেখুন এই ভিডিওতে
আজকে এরকম একটি মোবাইল ফোন সম্পর্কে আলোচনা করা হবে আজকের এই আর্টিকেলটিতে। আজকে আলোচনা করা হবে vivo y36 নিয়ে।
আরও দেখুন
vivo y36 এর দাম কত
vivo y36 মোবাইল ফোনটির প্রাইস বাংলাদেশের মার্কেটে অফিশিয়াল ভাবে ২৬,৯৯৯ টাকা। এর একটিমাত্র র্যাম ভ্যারিয়েন্ট বাজারে পাওয়া যায়। এখানে র্যাম হিসেবে আছে ৮ জিবি র্যাম এবং রম হিসেবে আছে ১২৮ জিবি
vivo y36 এর লুকিং কেমন
vivo y36 মোবাইল ফোনটি দুইটি কালার ভেরিয়েন্টে মার্কেটে পাওয়া যায়। একটি কালার ভেরিয়েন্টের নাম Meteor Black। এবং অন্য কালার ভেরিয়েন্টের নাম vibrant gold।
মোবাইল ফোনটির ব্যাক প্যানেলে ব্যবহার করা হয়েছে ক্রিস্টাল গ্লাস। ফলে এটি সূর্যের আলোতে খুব ভালোভাবে শাইন করে। এই মোবাইলটি দূর থেকে দেখতে খুবই আকর্ষণীয় মনে হয় এবং মনে হয় এটি অনেক দামি ফোন।
পিছনে একটি স্কলারশেপের ক্যামেরা হাউস আছে। ক্যামেরা হাউস টি তে আছে দুইটি বড় বড় ক্যামেরার সেন্সর এবং একটি ফ্লাশ লাইট। মোবাইলটি ডিসপ্লেতে পাঞ্চ হোল কাটআউট রয়েছে।
মোবাইলটি নিচের দিকে আছে প্রাইমারি স্পিকার, ইউএসবি টাইপ সি চার্জিং পোর্ট ,একটি ৩.৫ মিলিমিটার হেডফোন জ্যাকের পোর্ট ও প্রাইমারি মাইক্রোফোন। উপরের দিকে এসে সিম কার্ডের ট্রে এবং একটি নয়েজ ক্যানসেলেশন মাইক্রোফোন।
মোবাইলটির বাম দিকে কিছু নেই। ডান পাশে রয়েছে ভলিউম বাটন এবং পাওয়ার বাটন। এবং এই পাওয়ার বাটনটিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ইমপ্লিমেন্ট করা হয়েছে। ফিংগার প্রিন্ট এর পজিশন ঠিকঠাক জায়গা মতই আছে বলে মনে হয়েছে।
এর ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি যথেষ্ট ফাস্ট। কাজ করার সাথে সাথেই মোবাইল ফোনটিকে আনলক করে ফেলতে পারে। মোবাইলটির বক্সের সাথে সাথেই আপনারা পেয়ে যাবেন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ,একটি টাইপ সি ইউ এস বি চার্জিং এর কেবল, একটি ৪৪ ওয়াটের ফাস্ট চার্জার, একটি ব্যাক কভার এবং সিম ট্রে ইজেক্টর পিন।
এই মোবাইলের ওজন প্রায় ২০২ গ্রাম। এবং থিকনেস হলো প্রায় ৮.১ মিলিমিটার। এই ডিসপ্লে তে কোন রকমের প্রটেকশনের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই অবশ্যই একটি ভালো মানের স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করার পরামর্শ থাকবে।
vivo y36 এর ডিসপ্লে কেমন
ভিভোর এই মোবাইলে আছে ৬.৬৪ ইঞ্চি সাইজের বড় একটি ডিসপ্লে। ডিসপ্লেটির রেজুলেশন ফুল এইচডি প্লাস। এটি একটি আইপিএস এলসিডি প্যানেলের ডিসপ্লে। এবং এছাড়া এতে আরো পাবেন নাইন্টি হারজ refresh rate এর সাপোর্ট।
এই ডিসপ্লেটির পিক্সেল ডেনসিটি ৩৯৫ পিপিআই। এই ডিসপ্লেটির চিন ও বেজেল এরিয়া দাম অনুযায়ী ঠিকঠাক লেগেছে। পাঞ্চ হোল কাট আউট টি অনেক ছোট হওয়াতে দেখতে খুবই ভালো লেগেছে।
ডিসপ্লেটির ব্রাইটনেস আউটডোর কন্ডিশনে ব্যবহার করার জন্য ঠিকঠাকই আছে। খুব একটা সমস্যা হয় না। এখানে লো ব্রাইটনেস জনিত কোন ইস্যু পাবেন না।
আই পি এস ডিসপ্লে হিসেবে এর কোয়ালিটি যেমন হওয়ার কথা ঠিক সেরকমই। এখানে ন্যাচারাল কালার পাওয়া যায় তবে ডিসপ্লেটি যথেষ্ট ভাল শার্প। এখানে অন্যান্য কোন ধরনের সমস্যা পাওয়া যায়নি।
vivo y36 এর ক্যামেরা কেমন
ভিভো এই মোবাইল ফোনটিতে ব্যবহার করেছে রিয়ার সাইডে দুইটি ক্যামেরা। এখানে মেইন সেনসরটি হলো ৫০ মেগাপিক্সেলের। মেইন ক্যামেরাটির অ্যাপাচার f 1.8 । এবং অন্য ক্যামেরা টি হল দুই মেগাপিক্সেলের একটি ডেপথ সেন্সর।
ডেথ সেন্সরটির অ্যাপাচার f ২.৪। মোবাইলটির মেইন ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার সময় অবজেক্ট খুব সহজেই ফোকাস করা যাচ্ছিল। এখানে ডায়নামিক রেঞ্জ খুব ভালোভাবেই কাজ করে। পোর্ট্রেট মোডের ছবিগুলো খুবই ভাল ছিল।
কিনারার এলাকাগুলো খুব ভালোভাবেই ডিটেক্ট করতে পারে। এবং পোর্ট্রেট মোডে ছবি তোলার সময়ও ডায়নামিক রেঞ্জ ঠিকঠাকমতো কাজ করে। ছবির কালার গুলো ছিল ভাইব্রেন্ট। ভিভোর এই মোবাইলটির মেইন ক্যামেরার পারফরমেন্স সকলেরই ভালো লাগবে আশা করছি।
এখানে সেলফি শুটার হিসেবে থাকছে একটি f 2.4 অ্যাপাচারের একটি ১৬ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা। সেলফি ক্যামেরার পারফরম্যান্স যথেষ্ট ভালো ছিল। এখানেও পোর্ট্রেট মোডে খুব সুন্দর ছবি ওঠে।
এর উভয় ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও রেকর্ড করা যায় সর্বোচ্চ ১০৮০ মেগাপিক্সেল ৩০ এফপিএস দিয়ে। ভিডিও কোয়ালিটি ও ভালো লাগবে কারণ এখানে ইআইএস আছে এবং ভিডিও মোটামুটি ভাবে স্টেবলাইজ হয়।
vivo y36 এর পারফরমেন্স কেমন
Vivo y 36 এ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে আছে লেটেস্ট এন্ড্রয়েড ১৩। এবং ইউআই হিসেবে পাবেন ভিভোর নিজস্ব কাস্টম ইউআই ফান্টাস ওএস ১৩। প্রসেসর হিসেবে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে Qualcomm Snapdragon 680।
এই প্রসেসর টি একটি অক্টা কোরের প্রসেসর এবং এখানে ট্রানজিস্টর সাইজ মাত্র ৬ ন্যানোমিটার। এই প্রসেসরটি সর্বোচ্চ ২.৪ গিগা হার্জ স্পিডে কাজ করতে পারে। এবং জিপিইউ হিসেবে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে Adreno 610।
এটি কোন গেমিং প্রসেসর নয়। হেভি গেমিং ছাড়া প্রায় সকল ধরনের কাজকর্ম খুব ভালোভাবে সামলাতে পারে। এখানে মাল্টি টাস্কিং করে ভালো পারফর্মেন্স পাওয়া গেছে। ৮ জিবি র্যাম থাকাতে অনেক বেশি অ্যাপ নিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করা যায়। এখানে র্যাম ম্যানেজমেন্ট যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছে।
পাশাপাশি নাইন্টি হারজ refresh rate থাকাতে স্ক্রলিং করে বেশ ভালই লাগবে। যদিও বা এটি কোন গেমিং প্রসেসর নয় তবুও এখানে কিছু হেভি গেম খেলা যাবে। পারফরম্যান্স খুব একটা পাবেন না এই রকমের বাজেট থেকে।
এখানে পাবজি গেম টি সর্বোচ্চ মিডিয়াম গ্রাফিক্স দিয়ে খেলা যায়। গ্রাফিক্স আরো কমিয়ে নিলে সর্বোচ্চ ফ্রেম রেট পাওয়া যায় ৩০। কম গ্রাফিক্স সেটিং এ গেমটি খেলার সময় মোটামুটি ভাবে খেলা যায় কিন্তু এর গ্রাফিক্স দেখতে খুব একটা ভালো লাগে না।
এখানে ঘনঘন ফ্রেম ড্রপ পাবেন এবং pubg টাইপের গেমস খেলে একদমই ভালো লাগবে না। তবে এখানে ফ্রি ফায়ার ভালোভাবে খেলতে পারবেন। ফ্রি ফায়ার খেলার সময় মোটামুটি ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যায়। কল অফ ডিউটি লো গ্রাফিক্স সেটিং এ চলনসই পারফরম্যান্স পাবেন।
তবে আপনি যদি ই-ফুটবল খেলেন , সেখানে বেশ ভালোভাবে খেলার মত পারফরম্যান্স পাবেন। এবং লং টাইম ধরেও খুব ভালোভাবে খেলতে পারবেন। খুবই কম গেম খেলেন বা শখের গেমার যিনি অথবা যারা ছোটখাটো টুকটাক গেম গুলো খেলেন তারা এর পারফরমেন্স নিয়ে খুশি থাকবেন।
vivo y36 এর ব্যাটারি কত
vivo y36 এ ব্যবহার করা হয়েছে ৫০০০ মিলি এম্পিয়ার এর লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি। এবং এখানে পাবেন 44 ওয়াটের একটি ফাস্ট চার্জার। ফাস্ট চার্জারটি দিয়ে মোবাইল ফোন থেকে শূন্য থেকে ১০০ পর্যন্ত ফুল চার্জ করতে সময় লাগে প্রায় এক ঘন্টার মত।
একবার ফুল চার্জ করার পরে প্রায় দুই দিনের মতো সাধারণ ইউজে ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায়। আর একটানা হেভি ইউজ করে ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায় প্রায় সাত ঘন্টার মত।
vivo y36 এর অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্য
১। ভিভোর এই মোবাইল এ ওয়াইড ভাইন এল ওয়ান এর সাপোর্ট করে। তাই এখানে আপনি বিভিন্ন ott প্লাটফর্মে ফুল এইচডি ভিডিও ইনজয় করতে পারবেন।
২। ওয়াইফাই টু গিগা হার্জ এবং ওয়াই ফাই ফাইভ গিগা হার্জ উভয়টি এখানে সাপোর্ট করে।
৩। ভিভো এখানে ব্যবহার করেছে ufs 2.2 ক্যাটাগরি স্টোরেজ। এজন্য এখানে ডাটা ট্রান্সফার করার সময় তুলনামূলকভাবে বেশি স্পিড পাবেন।
৪। এই মোবাইলে সর্বোচ্চ ৮ জিবি পর্যন্ত ভার্চুয়াল র্যাম ব্যবহার করে। যা আপনাকে মাল্টি টাস্কিং করার সময় হালকা সাপোর্ট দেবে।
৫। এবার ইউ আই এর পারফরম্যান্স এখানে আমাদের খুবই ভালো লেগেছে। ইউ আই এ কোন ধরনের ল্যাগ, হ্যাং নেই। এটিকে অনেক স্মুথ লেগেছে।
৬। এখানে জাইরস্কোপ সেন্সরের সাপোর্ট আছে যদিও এটি কোন গেমিং ফোন নয়। পাশাপাশি এখানে ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাথে ফেস আনলক সুবিধা পাবেন সিকিউরিটি হিসেবে।
vivo y36 কেনো কিনবেন
ভিভোর এই মোবাইলটি দেখতে খুবই স্টাইলিশ। এখানে খুব ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায়। প্রসেসরটি পাওয়ার ইফিশিয়েন্ট হওয়াতে ব্যাটারি কম বার্ন করে। এবং সাথে পাবেন ফাস্ট চার্জার যা দিয়ে তাড়াতাড়ি চার্জ করা যায়।
এই মোবাইলটির পিছন এবং সামনে উভয় ক্যামেরাই খুবই ভালো। মোবাইলটির ক্যামেরা পারফরমেন্স দাম অনুযায়ী ভালো কিছু প্রোভাইড করছে।
আপনি যদি একজন সাধারন ইউজার হয়ে থাকেন, খুব বেশি গেমিং করেন না বা গেম খেলা তেমন একটা হয় না, দেখতে খুব সুন্দর স্টাইলিশ, ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ লাগবে এবং ভালো ক্যামেরা লাগবে তাহলে আপনার জন্য এটি অন্যতম একটি সেরা মোবাইল ফোন
vivo y36 কেনো কিনবেন না
Vivo y 36 মোবাইল ফোনটিতে দাম অনুযায়ী অবশ্যই একটি অ্যামোলেড প্যানেলের ডিসপ্লে দেওয়া উচিত ছিল। এখানে সেকেন্ডারি একটি স্পিকার দিলে আরো ভালো সাউন্ড আউটপুট পাওয়া যেত।
এবং আপনি যদি গেমার হয়ে থাকেন বা এই রকমের বাজেট দিয়ে মোবাইল ফোন কেনার পর সেটা দিয়ে গেমিং করার আশা করেন তাহলে এটি আপনার জন্য না। বিশেষ করে পাবজি টাইপের গেম এখানে একদমই ভালো লাগবে না। টুকটাক ছোটখাটো গেম খেলে থাকলে তাহলে নিতে পারেন।
কিন্তু উড়াধুরা গেমিং করেন এবং বিশেষ করে আপনি হেভি ইউজ করবেন ,এমন যদি হয় তাহলে এই মোবাইলটি কিনবেন না।
২০২৩ সালে এসে আমরা অবশ্যই এই ধরনের বাজেট থেকে ফাইভ জি প্রসেসর আশা করতে পারি। এখানে স্ন্যাপড্রাগন এর যে প্রসেসরটি ব্যবহার করা হয়েছে তা সাধারণত আমরা মিড টু এন্ট্রি বাজেটের ফোনেও দেখে থাকি।
সস্তার প্রসেসর যখন এরকম দামী একটা ফোনে অর্থাৎ মিড রেঞ্জের বাজেটে ব্যবহার করা হয় সেটা অবশ্যই কারো ভালো লাগার কথা না। তবে সবাই তো আর গেম খেলার উদ্দেশ্যে মোবাইল কিনেন না।
তাই যারা নন গেমার এবং রেগুলার পারফরমেন্স নিয়ে সন্তুষ্ট তাদের জন্য এটি ভালো পছন্দ হতে পারে। অন্যথায়, আপনি এটি নিবেন না বলে আমি মনে করি। এছাড়া এখানে আল্ট্রা ওয়াইড ক্যামেরাটি নেই। থাকলে অবশ্যই ক্যামেরা সেকশনে আরো বেশি এগিয়ে থাকতো।
সর্বশেষ মন্তব্য
ফোনগুলো সাধারণত ক্যামেরা এবং বেশি স্টাইলিশ হয়ে থাকে। সাধারণত আমাদের দেশের তরুণীরা যেরকম পছন্দ করেন ,সেই রকমের কাস্টমার টার্গেট করে তারা মোবাইল ফোন লঞ্চ করে।
এজন্য মোবাইলটি কিনবেন কিনা তা জানার জন্য পুরো লেখাটি আবারো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন তারপর সিদ্ধান্ত নিন। আপনার চাহিদা এটি পূরণ করতে পারছে কিনা সেটাকে প্রাধান্য দিন।
আজকে এ পর্যন্তই। আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে নিয়মিত আমাদেরকে ভিজিট করুন। এরকমের আর্টিকেল নিয়মিত আমরা পোস্ট করে থাকি। সঙ্গেই থাকুন। কেমন লাগলো তা কমেন্টে জানিয়ে দিতে পারেন।