ট্রান্সজেন্ডার কি| ট্রান্সজেন্ডারের আদ্যোপান্ত এবং এর প্রভাব সমাজে কেমন হতে পারে

ট্রান্সজেন্ডার কি| ট্রান্সজেন্ডারের আদ্যোপান্ত এবং এর প্রভাব সমাজে কেমন হতে পারে

 

ট্রান্সজেন্ডার কি

ট্রান্সজেন্ডার কথাটির মধ্যে দুইটি শব্দ লক্ষ্য করা যায়। এর একটি শব্দ হলো ট্রান্স এবং অপর শব্দটি হল জেন্ডার। এই দুইটি শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ট্রান্স মানে পরিবর্তন এবং জেন্ডার মানে লিঙ্গ। তাহলে ট্রান্সজেন্ডার শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে লিঙ্গের পরিবর্তন।

 

তাহলে ট্রান্স জেন্ডার বলতে একজন স্বাভাবিক নারী অথবা পুরুষ তার লিঙ্গকে যখন বিপরীতে রূপান্তর করে সেই অবস্থাটি বুঝায়। অর্থাৎ পুরুষ হয়ে জন্ম নেওয়া একজন ব্যক্তি যদি নিজেকে নারীদের রূপান্তর করেন অথবা নারী হয়ে জন্ম নেওয়া একজন ব্যক্তি যদি নিজেকে পুরুষে রূপান্তর করেন তাহলে তাকে ট্রান্সজেন্ডার বলা হয়।

 

এই পরিবর্তনটি করার সময় উক্ত নারী অথবা পুরুষ যদি নিজের যৌনাঙ্গকে পরিবর্তন করেন অথবা না করেন শুধু মনে মনে নিজেকে বিপরীত লিঙ্গ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় তকেও ট্রান্সজেন্ডার বলা হয়। এক কথায় ট্রান্সজেন্ডার বলতে তাহলে লিঙ্গ পরিবর্তনকেই বোঝানো হয়। সেটা যেভাবেই হোক না কেন।

 

ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য

 

ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া জনগোষ্ঠী শব্দ দুইটি একই মনে হলেও আসলে এই দুইটি একই জিনিস নয়। তবে দুইজনের মধ্যে কিছু বিষয়ের মিল পাওয়া যায় যেগুলোকে তাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে অনেক বেশি পরিচিত।

 

ট্রান্সজেন্ডার এবং হিজরা জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে অনেক জায়গাতে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য এবং নিচু করে দেখা হয়। এদেরকে দেখে আসলে কোন লিঙ্গের মানুষ সেটা বোঝা সম্ভব হয় না। প্রথম দেখাতে যে কেউ লিঙ্গ শনাক্ত করতে পারে না বাহ্যিক গঠন দেখে। এমনটা হতে পারে দেখে মনে হচ্ছে পুরুষ মানুষ কিন্তু সে নারীর মতো আচরণ করছে। আবার নারীকে মনে হচ্ছে পুরুষের মতো আচরণ করতে।

 

দেখতে নারী কিংবা পুরুষের মতো হলেও অনেক সময় তাদের কন্ঠ বিপরীত লিঙ্গের মতো হয়ে থাকে। মেয়ে মানুষকে দেখা যায় ছেলেদের মত ভারী কন্ঠে কথা বলতে।

কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

মধুময় বাদাম কেনো খাবেন | মধুময় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত

 

বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডার

 

বাংলাদেশের ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের কে তৃতীয় লিঙ্গের অধীন হিজরা হিসেবে মনে করা হয়। ২০০৯ সালের বাংলাদেশের একটি আইন অনুযায়ী তারা তৃতীয় লিঙ্গের বাংলাদেশী অধিবাসী। সর্বশেষ ২০২২ সালের একটি আইনে তাদেরকে তৃতীয় লিঙ্গের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে হিজড়া উন্নয়ন কর্মসূচি নামে একটি প্রকল্পের কাজ ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে চলে আসছে।

 

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে তাসনুভা নামের একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী সংবাদ পাঠের মধ্য দিয়ে খুব বেশি ভাইরাল হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে একজন ট্রান্সজেন্ডার যার নাম ছিল উর্মি তালুকদার প্রথম ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

 

 

ট্রান্সজেন্ডার অপারেশন

 

ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা অনেক সময় অপারেশন করার মাধ্যমে তাদের লিঙ্গকে পরিবর্তন করে। এই সমস্ত অপারেশনের মধ্যে যেসব কাজ করা হয় তা হলো নারীর যৌনাঙ্গ সৃষ্টি করা, পুরুষ যৌনাঙ্গের পুনর্গঠন, স্তন অপসারণ কিংবা নতুন করে স্তন সৃষ্টি করা, মুখের আকার আকৃতির পরিবর্তন করা।

ট্রান্সজেন্ডার কি| ট্রান্সজেন্ডারের আদ্যোপান্ত এবং এর প্রভাব সমাজে কেমন হতে পারে

ট্রান্সজেন্ডার অপারেশন করার পূর্বে অবশ্যই ওই ব্যক্তিকে একজন মনোবিজ্ঞানীর সাথে পরামর্শ করা উচিত সে প্রকৃতপক্ষে এটির জন্য উপযুক্ত কিনা। এই ধরনের অপারেশনগুলো সাধারণত অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়।

 

ট্রান্সজেন্ডারদের কি বাচ্চা হয়

 

যেসকল ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা তাদের জন্মের সাথে পাওয়া যৌনতা অনুভব করে তারা বাচ্চা নিতে পারে। মানসিকভাবে তারা নিজেদেরকে যাই মনে করুক না কেন জন্মের সাথে পাওয়া যৌনতা তারা যদি উপভোগ করে তাহলে সেই অনুযায়ী তারা সন্তান ধারণ করতে পারে। যারা বিষয়টিকে শুধু মনে মনে করে তাদের জন্য এই কাজটি তুলনামূলকভাবে বেশি সহজ। অপরদিকে যারা সার্জারি করে ফেলেছে তাদের জন্য সামান্য জটিল হতে পারে।

 

পুরুষ থেকে মহিলা ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা কৃত্রিম উপায়ে সন্তান ধারণ করতে পারে। ২০২৩ সালে একজন ট্রান্সজেন্ডার মহিলা সর্বপ্রথম সন্তান ধারণ করেন। কেলি মাইকেলস নামের ওই মার্কিনী আইভিএফ পদ্ধতি ব্যবহার করেন সন্তান ধারণ করতে।

 

হিজড়ারা কি আসলেই ট্রান্সজেন্ডার?

 

হিজরারা ট্রান্সজেন্ডার নন। তারা জন্মের সময় এক ধরনের বিকলাঙ্গতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। যার ফলে তাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হন। তাছাড়া এই ব্যাপারটি সম্পূর্ণভাবে ন্যাচারাল হয়ে থাকে। এখানে তাদের কোন ইচ্ছা বা অনিচ্ছার প্রভাব থাকে না। ট্রান্সজেন্ডার শুধু তারাই যারা জন্মগতভাবে শুধু মেয়ে অথবা শুধু ছেলে হিসেবে বড় হয়েছে। এরপর হঠাৎ করে তাদের মানসিক কারণে নিজেদেরকে বিপরীত লিঙ্গের মনে করে। অতঃপর কেউ সার্জারি করে আবার কেউ করে না। হিজড়াদের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি কখনোই ঘটেনা

 

সিমেল কি

 

সিমেল কথাটি হিজড়াদের ইংরেজি প্রতিশব্দ। সিমেল বলতে বোঝানো হয় তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে। নারী এবং পুরুষ উভয় ধরনের বৈশিষ্ট্য তাদের মাঝে দেখা যায়। এক্ষেত্রে কারো মাঝে নারীর বৈশিষ্ট্য বেশি হয়ে থাকে পুরুষের তুলনায় আবার কারো ক্ষেত্রে পুরুষের বৈশিষ্ট্য বেশি হয়ে থাকে নারীর তুলনায়। মূল কথা দুই ধরনের মিশ্রণ এদের মধ্যে থাকে।

 

ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়াদের মধ্যে পার্থক্য কি

 

ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা ইচ্ছা করে তারা নিজেদের লিঙ্গের পরিচয় পরিবর্তন করে। হিজরারা সেটা করে না। তারা তাদের পুরুষালী বৈশিষ্ট্য অথবা মেয়েলি বৈশিষ্ট্যর উপর নির্ভর করে নিজেকে ওইভাবে প্রকাশ করে। যার মধ্যে পুরুষের বৈশিষ্ট্য বেশি সে নিজেকে পুরুষের মতো সাজায়, পুরুষের মতো চলাফেরা করে। অন্যদিকে যার মাঝে নারীর বৈশিষ্ট্য বেশি সে নিজেকে নারীর আদলে পরিচয় দেয়।

 

ট্রান্সজেন্ডারের ইতিহাস

 

প্রাচীনকালের রোম এবং গ্রিসে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা “হিরোজেন্টেস” হিসেবে পরিচিত ছিল। তাদেরকে ওই সময় অভিনেতার নজরে দেখা হতো। মধ্যযুগে এদেরকে “ডলিস” বলা হতো এবং এদেরকে ভয়ংকর অথবা অসুস্থ হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। উনিশ শতকে এইরকম ব্যক্তিদের কে “ট্র্যান্সসেক্সুয়াল” নামে আখ্যায়িত করা হয়।

 

এই সময়ও এদেরকে মানসিকভাবে অসুস্থ মনে করা হতো। বিশ শতকের মাঝামাঝিতে প্রায় ১৯৬০ সালে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের অধিকারের আন্দোলন শুরু হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রতে এবং তা পরবর্তীতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমান সময়েও এই আন্দোলন চলমান আছে। বরং বর্তমান সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে এই ধারণাটি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হচ্ছে।

 

 

ট্রান্সজেন্ডার এর ক্ষেত্রে ইসলামী বিধান

 

ট্রান্সজেন্ডার কে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে হারাম বলা হয়। এটি একধরনের সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন ঘটানো। আর এটি যেহেতু কুরআনে আল্লাহ নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন তাই ট্রান্সজেন্ডার কোনভাবেই জায়েজ হতে পারে না।

 

ট্রান্সজেন্ডারের সমাজিক প্রভাব

 

বাংলাদেশের মতো মুসলিম প্রধান দেশে একটি বড় সামাজিক সমস্যা। এটিকে সামাজিকভাবে এক ধরনের মানসিক ব্যাধি হিসেবে মনে করা হয়। ছোটবেলায় অনেক ছেলেমেয়েদেরকে দেখা যায় বিপরীত লিঙ্গের মত সাজ সজ্জা করতে। এরকম দেখলে বড়রা তাদেরকে সংশোধন করে দেয়। কিন্তু যখন এটি আইনগতভাবে বৈধতা দেওয়া হবে তখন আর তাকে সংশোধন করারও কোন উপায় থাকবে না।

ট্রান্সজেন্ডার কি| ট্রান্সজেন্ডারের আদ্যোপান্ত এবং এর প্রভাব সমাজে কেমন হতে পারে

ট্রান্সজেন্ডার হওয়ার মাধ্যমে কেউ নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের মনে করলেও সে কিন্তু সম্পূর্ণভাবে বিপরীত লিঙ্গের হয়ে যায় না। তার মধ্যে নিজস্ব জন্মগত লিঙ্গগত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে। এটি একদিক দিয়ে সমকামীতাকে উসকে দেয়। এবং এটি একটি ধ্বংসের কারণ হতে পারে মানব সভ্যতার জন্য। ট্রান্সজেন্ডার এর মত কোন আচরণ কারো মাঝে দেখা গেলে তাকে নিয়ে এখন আর মজা করার সময় নেই বরং সিরিয়াস ভাবে তাকে নিয়ে মানসিক থেরাপি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে।

 

সামাজিকভাবে নারী পুরুষের বিভিন্ন ধরনের অধিকার থাকে। অনেকেই ইচ্ছা করে ট্রান্সজেন্ডার গ্রহণ করে বিপরীত লিংকের হয়ে যায় শুধুমাত্র সেই সমস্ত অধিকারগুলোকে ভোগ করার জন্য। এটি প্রতারণার সমতুল্য। বাংলাদেশের সপ্তম শ্রেণীতে একটি বইয়ের এই ধরনের একটি গল্প থাকায় ওই বইটিকে বয়কট করে দেওয়া হয় সামাজিকভাবে। এখন ওই বইটির পাঠদান নিষিদ্ধ আছে। সারা দেশজুড়ে এই বিষয়টি তুমুল সমালোচিত হয়।

 

ট্রান্সজেন্ডার সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর

 

১। ট্রান্সজেন্ডার এর বাংলা কি?

উত্তর: পাণ্ডব ,নবীসা। হিজড়া বলতেও এই শব্দটি ব্যবহার হয়।

 

২। ট্রান্সজেন্ডার বিষয়টি প্রাকৃতিক কিনা?

উত্তর: ট্রান্সজেন্ডার প্রাকৃতিকভাবে হয় না। একজন ব্যক্তির মানসিক পরিবর্তন অথবা সার্জারি করার মাধ্যমে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডার হয়ে থাকে।

 

৩। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা কি শারীরিকভাবে অন্যান্য দিক দিয়ে সুস্থ থাকে?

উত্তর: ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা শারীরিকভাবে অন্যান্য দিক দিয়ে সুস্থ থাকে সাধারণ মানুষের মতোই। সাধারণ মানুষের মতো তারা আবার অসুস্থ হয় চিকিৎসার মাধ্যমে আবার সুস্থও হয়। 

Hello! I’m Razwan, a dedicated Content Writer 2 years of hands-on experience.

Leave a Comment