আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। এন্ট্রি বাজেটে xiaomi নিয়ে এসেছে তাদের একটি নতুন মোবাইল ফোন। আজকের লেখায় আলোচনা করা হবে Xiaomi Redmi A1+ মোবাইল ফোনটিকে নিয়ে।
যারা আগে কখনো স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেননি, সেকেন্ডারি একটি ডিভাইস কিনতে চাচ্ছেন সাধারণ টুকটাক ব্যবহার করার জন্য তারা মনোযোগ দিয়ে আজকের আর্টিকেলটি পড়ুন।
Xiaomi Redmi A1+ মোবাইল এ স্পেসিফিকেশন হিসেবে কি কি আছে ,এর দাম কত ,এটি বাজেট অনুযায়ী কিনবেন কিনা, কাদের জন্য এই মোবাইল ফোনটি ভালো হবে ইত্যাদি জানার জন্য পড়তে থাকুন।
Redmi a1+ এর রিভিউ দেখুন এখানে
Redmi A1+ এর প্রাইস কত টাকা
Redmi A1+ বাংলাদেশের মার্কেটে শুধুমাত্র একটি ভেরিয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে। এই মোবাইলটির ৩ জিবি র্যাম এবং ৩২ জিবি রম এর দাম ১১,৯৯৯ টাকা।
Redmi A1+ এর লুকিং ও ডিজাইন কেমন
Redmi A1+ মোবাইল ফোনটি সবমিলিয়ে তিনটি কালার ভেরিয়েন্টে মার্কেটে পাওয়া যায়। কালার ভেরিয়েন্ট গুলোর নাম হল যথাক্রমে Light Green, Light Blue ও Black।
এই মোবাইল ফোনটির পিছনে রয়েছে লেদার টেকচার এর খুবই চমৎকার এক ধরনের ম্যাট ফিনিশ। এই দামের ফোন হিসেবে এত চমৎকার ভাবে এই রকম ডিজাইন নিঃসন্দেহে অনেক বেশি প্রশংসার দাবিদার।
Redmi A1+এর উপর দিকে রয়েছে একটি স্পিকার। নিচের দিকে আছে প্রাইমারি মাইক্রোফোন ,একটি মাইক্রো ইউএসবি চার্জিং পোর্ট এবং 3.5 মিলিমিটারের হেডফোন জ্যাকের পোর্ট।
মোবাইল ফোনের ডান পাশে আছে ভলিউম বাটন এবং পাওয়ার বাটন এবং বাম পাশে আছে সিম কার্ডের একটি ট্রে। এখানে ব্যবহার করা যাবে দুইটি সিম কার্ডের পাশাপাশি একই সঙ্গে একটি মেমোরি কার্ড ব্যবহার করার সুবিধা।
মোবাইলটির ওজন হল প্রায় ১৯২ গ্রাম এবং থিকনেস ৯.১ মিলিমিটার। এখানে ডিসপ্লে তে কোনো ধরনের প্রটেকশন ব্যবহার করা হয়েছে কিনা সেই বিষয়ে কোন স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই আপনারা অবশ্যই একটি ভালো মানের স্ক্রিন প্রটেক্টর কিনে ব্যবহার করবেন।
এছাড়াও মোবাইলের পিছনে আছে একটি ফিজিক্যাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। ফিঙ্গার প্রিন্ট এই স্পিড সামান্য এনিমেশন ডিলে হয় বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।
Redmi A1+ এর ক্যামেরা কেমন
Redmi A1+ এর পিছনে ব্যবহার করা হয়েছে ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ। মেইন সেনসরটি দুই অ্যাপাচারের ৮ মেগাপিক্সেলের এবং অন্যটি রয়েছে QVGA ক্যামেরা।
ক্যামেরার কোয়ালিটি দিনের আলোতে খুবই চমৎকার পাওয়া যাচ্ছিল। অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তোলা যায় এই মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়ে। ছবিগুলোর শার্পনেস এবং ক্লিয়ারিটি খুবই চমৎকার লাগবে অনেকের কাছে।
অবজেক্ট গুলো খুব সহজেই ফোকাস করতে পারে। এর পাশাপাশি ডায়নামিক রেঞ্জ ভালোই ধরে রাখতে পারে। এই মোবাইলটির সামনে রয়েছে পাঁচ মেগাপিক্সেলের ২.২ অ্যাপাচারের সেলফি শুটার।
সেলফি ক্যামেরার পারফরম্যান্স মোটামুটি ভালই লেগেছে। অত বেশি পরিষ্কার ছবি না তুললেও দিনের আলোতে কাজ চালানোর মত ছবি পাবেন। পোট্রেট মোডের ছবিগুলো কোয়ালিটির দিক থেকে বলতে গেলে এভারেজ।
পিছনের ক্যামেরাটা দিয়ে ভিডিও রেকর্ড করা যায় 1080 মেগাপিক্সেলের 30 ফ্রেম পার সেকেন্ড দিয়ে। ছবিগুলো হালকা কাপাকাপি করে বলে মনে হয় ভিডিও করার সময়। একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক এই বাজেটের প্রায় সকল ফোনে ভিডিও কোয়ালিটি এরকমই পাওয়া যায়।
Redmi A1+ এর পারফরমেন্স কেমন
Redmi A1+ মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে একটি কোয়াড কোর এর প্রসেসর। প্রসেসরটির নাম MediaTek Helio A22। এটি সর্বোচ্চ ২.০ গিগা হার্জ স্পিডে কাজ করতে পারে।
জিপিইউ হিসেবে এখানে পাওয়া যাবে PowerVR GE8320। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে এন্ড্রয়েড টুয়েলভ এর গো এডিশন। এবং এখানে প্রায় শাওমির স্টক ইউ আই ব্যবহার করেছে।
দৈনন্দিন কাজ করার জন্য এই মোবাইল ফোনটি থেকে ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে। প্রসেসর টি কোন গেম খেলার মত প্রসেসর নয়। তাই এখানে হেভি গেম না খেলার পরামর্শ থাকবে। টুকটাক যে সমস্ত ছোট খাটো টুডে গেম রয়েছে সেগুলো খেলতে পারবেন।
পাবজি এখানে লোয়েস্ট সেটিংসে আমরা প্লে করে দেখেছি এখানে অনেক বেশি ল্যাগ এবং ফ্রেম ড্রপের দেখা পাওয়া যায়। এবং এইভাবে আপনি খুব বেশিক্ষণ গেম খেলে মজা পাবেন না। আপনার অস্বস্তি লাগবে আপনি বিরক্ত বোধ করবেন।
ফ্রী ফায়ার মোটামুটি ভাবে খেলা গেলেও ফ্রি ফায়ারের জন্যও এই মোবাইল ফোনটিকে আমরা সাজেস্ট করছি না। মাঝেমধ্যে গেম খেলার যদি আপনার ইচ্ছা হয় তাহলে ছোটখাটো গেম গুলো খেলবেন।
Redmi A1+ এর ব্যাটারি কত
Redmi A1+ এ ব্যবহার করা হয়েছে ব্যাটারী হিসেবে পাঁচ হাজার মিলি অ্যাম্পিয়ার এর বিশাল বড় ব্যাটারি। এটি একটি লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি এবং এটি নন রিমুভএবল।
বক্সের সাথেই পাওয়া যাবে দশ ওয়াটের চার্জার। দশ ওয়াটের চার্জার দিয়ে এই মোবাইলটিকে সম্পূর্ণ ফুল চার্জ করতে প্রায় তিন ঘন্টার বেশি সময় লাগবে।
একবার ফুল চার্জ করার পরে সাধারণ ইউজ করে প্রায় দেড় দিনের মতো ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায়। আর একটানা হেভি ইউজ করে ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যাবে প্রায় ছয় ঘন্টার মত।
Redmi A1+ এর ডিসপ্লে কেমন
Redmi A1+ মোবাইলে ডিসপ্লে হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ৬.৫২ ইঞ্চি সাইজের একটি বড় ডিসপ্লে। ডিসপ্লে টির রেজুলেশন এইচডি প্লাস। এটি একটি আইপিএস এলসিডি প্যানেল ডিসপ্লে।
এবং এখানে পিক্সেল ডেনসিটি ২৬৯ পিপিআই। ডিসপ্লে টিতে ৪০০ নিটস পর্যন্ত ব্রাইটনেস পাওয়া যায়। ফলে এটি আউটডোরে ব্যবহার করতে খুব একটা সমস্যা না হলেও ডিরেক্ট সানলাইট এ ব্যবহার করতে সমস্যা হতে পারে।
ডিসপ্লেটির চিন এবং বেজেলএরিয়া দাম হিসেবে অ্যাভারেজ ক্যাটাগরিতে রাখা যায়। ডিসপ্লেটিতে রয়েছে একটি ওয়াটার ড্রপ নচ এবং এখানেই আছে সেলফি ক্যামেরাটি।
ডিসপ্লেটির কোয়ালিটি দামের সঙ্গে ঠিকঠাকই পাবেন। ভিডিও কনটেন্ট দেখে খুবই ভালো লাগবে। ডিসপ্লেটিতে ওয়াইড ভাইন এল থ্রি এর সাপোর্টও আছে।
Redmi A1+ এর অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্য
১। আপনারা চাইলে এখানে সর্বোচ্চ এক টেরাবাইট পর্যন্ত স্টার্নাল মেমোরি কার্ড এখানে ব্যবহার করতে পারবেন।
২। ২ জিবি পর্যন্ত ভার্চুয়াল র্যাম এক্সটেন্ড করে এখানে ব্যবহার করা যাবে।
৩। Xiaomi এখানে ক্যামেরা টু এপিআই এর ফুল এক্সেস দেয় নাই। ফলে আপনারা এখানে ম্যানুয়াল ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারবেন না।
৪। Xiaomi এর এই মডেলটিতে ওয়াইফাই এর শুধুমাত্র একটি ব্যান্ড সাপোর্ট করে।
৫। ডুয়েল ফোরজি সাপোর্ট এখানে পাওয়া যাবে। সিকিউরিটি হিসেবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর পাশাপাশি পাবেন ফেস আনলক এর সুবিধা।
৬। মোবাইলটির স্পিকার পারফরমেন্স দাম অনুযায়ী ভালো লাগবে। ফুল ভলিউমে ভালো কোয়ালিটির সাউন্ড পাওয়া যায়।
Redmi A1+ কেনো আপনি কিনবেন
শাওমির এই মোবাইল ফোনটি খুবই হ্যান্ডি এবং একহাতে খুব সুন্দর ভাবে ব্যবহার করা যায় কোনরকম অসুবিধায় পড়তে হয় না। নজর কারা ডিজাইন রয়েছে এখানে। ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপও পাওয়া যায়।
এখানে ক্যামেরাটি দামের সাথে ভালো কিছু দিচ্ছে। তাই সুন্দর আউটলুক এর একটি ভালো ফোন কিনতে চাচ্ছেন, ভালো ব্র্যান্ডের থেকে তারা এটিকে পছন্দ করতে পারেন। সেকেন্ডারি ডিভাইস যাদের দরকার, এটি হতে পারে আপনার জন্য একটি আদর্শ ডিভাইস।
Redmi A1+ কেনো আপনি কিনবেন না
এই মোবাইলটি কোন হেভি ইউজ করার মত মোবাইল ফোন নয়। খুব বেশি মাল্টি টাস্কিং করা কিংবা টুকটাক গেম খেলা ,প্রেসার দিয়ে ব্যবহার করা ইত্যাদি যদি আপনার ডিমান্ড থাকে তাহলে আপনি এই মোবাইলটি কিনবেন না।
এই মোবাইল ফোনটিতে ২০২৩ সালে এসেও ব্যবহার করা হয়েছে মাইক্রো ইউএসবি চার্জিং পোর্ট, যা প্রযুক্তির উন্নতির দিক থেকে উন্নতি তো নয় ,যেন এটি অবনতি। বর্তমান কার সময়ে আমরা কোনো মোবাইল ফোনেই মাইক্রো ইউএসবি চার্জিং পোর্ট আর দেখতে চাচ্ছি না।
এখানে সামনের ক্যামেরা রেজুলেশন আরেকটু বাড়িয়ে দিলে অবশ্যই আরো ভালো ছবি পাওয়া যেত। এবং এই মোবাইলটির দাম যদি সামান্য একটু কম হতো তাহলে এটি বাজেট হিসেবে বেস্ট হতো।
সর্বশেষ মন্তব্য
শাওমি কোম্পানির একটি এন্ট্রি বাজেটের মোবাইল ফোন নিয়ে আজকের পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। যার মডেল নাম্বারটি হল Redmi A1+। টুকটাক কোন বিষয়ে যদি বাদ পড়ে থাকে তাহলে আপনার মতামত আপনি কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন।
আমাদের ওয়েব সাইটে নিয়মিত এরকমের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়। তাই নিয়মিত আমাদেরকে ভিজিট করুন এই রকমের আর্টিকেল পেতে।