আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। রিয়েল মি বাংলাদেশের একটি খুব জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। অনেকে রিয়েল মি কে চিনে থাকে ভ্যালু ফর মানি ডিভাইস প্রোভাইড করার জন্য। আজকের এই পোস্টে আলোচনা করা হবে রিয়েল মি 9i কে নিয়ে।
Realme 9i এটি আসলেই ভ্যালু ফর মানি প্রোভাইড করে কিনা, কিনবেন কিনা, এখানে স্পেসিফিকেশন হিসেবে কি কি আছে জানার জন্য মনোযোগ দিয়ে আজকের আর্টিকেলটি পড়ুন।
Read more
Realme 9i bangladesh price নিচে দেওয়া হলো
Realme 9i এর দাম কত টাকা
Realme 9i মোবাইল ফোনটি বাংলাদেশের মার্কেটে অফিসিয়াল ভাবে দুইটি ভেরিয়েন্ট এ পাওয়া যেতো। তবে এর 4gb র্যাম ৬৪ জিবি রম এর ভেরিয়েন্টি এক বছর পরে এসে পাওয়া যায় না শুধু ৬ জিবি রেম ও ১২৮ জিবি রমটি পাওয়া যায়।
Realme 9i এর রিভিউ দেখুন এখানে বাংলায়
৬ জিবি র্যাম ও ১২৮ জিবি রম ভেরিয়েন্ট এর দাম ২০,৯৯৯ টাকা। এক বছর আগে যদিওবা এর দাম আরো কিছুটা কম ছিল কিন্তু বাংলাদেশের মার্কেটে ডলার সংকটের কারণে এটি এখন ২০,৯৯৯ টাকায় পাওয়া যায়।
Realme 9i এর লুকিং কেমন
Realme 9i দুইটি কালার ভেরিয়েন্টে পাওয়া যায়। একটি নাম প্রিজম ব্ল্যাক আর একটির নাম প্রিজম ব্লু। এর পিছনটি প্লাস্টিকের তৈরি এবং এর বডি ফ্রেমটিও প্লাস্টিক দিয়ে বানানো।
এখানে ডিসপ্লেতে প্রটেকশন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে Dragontail Pro Glass। রিয়েলমি নাইন আই এর থিকনেস হল ৮.৪ মিলিমিটার। এবং এই মোবাইলটির ওজন প্রায় ১৯০ গ্রাম।
ব্যাক প্যানেলটি তে ফিঙ্গারপ্রিন্টের দাগ পরে। যেটা অনেকের কাছে কিছুটা বিরক্তিকর লাগতে পারে। একটি ভাল দেখে ব্যাক কভার ব্যবহার করলে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন।
Realme 9i এর নিচের দিকে আছে একটি স্পিকার গ্রিল, একটি টাইপ সি ইউ এস বি চার্জিং পোর্ট ,একটি প্রাইমারি মাইক্রোফোন এবং ৩.৫ মিলিমিটার এর হেডফোন জ্যাকের পোর্ট।
মোবাইলটির উপরের দিকে আসে একটি সেকেন্ডারি নয়েস ক্যান্সলেশন মাইক্রোফোন। বামদিকে আছে সিম কার্ডের একটি ট্রে এবং এখানে আপনারা দুইটি সিম কার্ডের পাশাপাশি একটি external memory card একই সাথে ব্যবহার করতে পারবেন।
এবং আরো আছে ভলিউম বাটন। ডানদিকে আছে শুধু পাওয়ার বাটন এবং এই পাওয়ার বাটনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর।
এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর টি যথেষ্ট ফাস্ট কাজ করতে পারে এবং কাজ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই মোবাইলের লক খুলে যাবে। ভেজা কিংবা ঘামযুক্ত হাত থাকলে তখন কিছুটা সমস্যাই পড়তে পারেন।
এছাড়াও মোবাইলটিতে সাদা সাদা লম্বা লম্বা দাগ রয়েছে যা দেখতে খুবই চমৎকার লাগে। মোবাইলটি একটু বড় হওয়াতে যাদের হাত ছোট তাদের সামান্য প্রবলেম হতে পারে।
Realme 9i এর ক্যামেরা কেমন
Realme 9i মোবাইল ফোনটির পিছনের ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ। এখানে মেইন সেনসরটি f 1.8 অ্যাপাচারের ৫০ মেগাপিক্সেলের একটি ক্যামেরা।
অন্য দুইটি লেন্স ২.৪ অ্যাপাচারের একটি ম্যাক্রো ক্যামেরা এবং একটি ডেপথ সেন্সর ক্যামেরা। উভয় ক্যামেরার রেজুলেশন ২ মেগাপিক্সেল করে।
পিছনের ক্যামেরাটি ছবি তোলার সময় ফোকাস দিতে সামান্য সমস্যা করছিল। কিন্তু এখানে ডাইনামিক রেঞ্জ খুব ভালো পাওয়া গিয়েছে। ছবিগুলো যথেষ্ট ভাইব্রেন্ট এবং কালারফুল।
সামনে ব্যবহার করা হয়েছে ১৬ মেগাপিক্সেলের একটি সেলফি শুটার। সেলফি ক্যামেরার পারফরমেন্স অভার অল ভালই লেগেছে। এখানে ডায়নামিক রেঞ্জের কিছু ঘাটতি পাবেন। ছবিগুলো কালার কিছুটা বাড়িয়ে দেয় যা দেখতে খুবই ভালো লাগে এবং অলমোস্ট বলা চলে সোশ্যাল মিডিয়া রেডি টাইপের ছবি।
পিছনের ক্যামেরাটি দিয়ে ভিডিও রেকর্ড করা যায় ১০৮০ মেগাপিক্সেলের সর্বোচ্চ ৩০ fps দিয়ে। এখানে ইআইএস বা এই ধরনের কোন সেন্সর না থাকাতে ভিডিও কোয়ালিটি কিছুটা কাপাকাপি করে বলে মনে হয়। তবে দাম হিসেবে এটি আবার ঠিকঠাকই আছে।
Realme 9i এর ডিসপ্লে তে কি কি আছে
রিয়েলমি 9i মোবাইল ফোনটিতে ডিসপ্লে হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ৬.৬ ইঞ্চি সাইজের বিশাল বড় একটি ডিসপ্লে। ডিসপ্লেটির রেজুলেশন ফুল এইচডি প্লাস এবং এখানে ৯০ হার্জ রিফ্রেশ রেট এর সাপোট রয়েছে। ডিসপ্লেটির পিক্সেল ডেনসিটি ৪০১ পিপিআই।
এখানে টাচ স্যাম্পলিং রেট আছে ১৮০ হার্জ । ফলে ডিসপ্লেটিকে অনেক বেশি স্মুথ লেগেছে ব্যবহার করার সময়। ডিসপ্লের কোয়ালিটি যথেষ্ট ভাইব্রেনট। এটি যদিও বা আইপিএস এলসিডি প্যানেলের ডিসপ্লে তবুও এখানে কালার গুলো খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে।
ডিসপ্লেটি একটি পাঞ্চ হোল কাট আউটের ডিসপ্লে। এখানে চিন এবং বেজেলের পরিমাণ দাম হিসেবে অনেক সুন্দর বলা চলে।
ডিসপ্লেটির ব্রাইটনেস যথেষ্ট ভালো। আউটডোর কন্ডিশনে ব্যবহার করার সময় খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয়নি।
Realme 9i এর ব্যাটারি কত দিয়েছে
Realme 9i মোবাইল ফোনটিতে ব্যাটারি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০০০ মিলিম্পিয়ার এর অনেক বড় ব্যাটারি। এটি একটি লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি। ব্যাটারিটি নন রিমুভেবল।
এখানে চার্জার হিসেবে বক্সের মধ্যেই পেয়ে যাবেন ৩৩ ওয়াটের একটি ফাস্ট চার্জার। এই ফার্স্ট চার্জারটি দিয়ে মোবাইল ফোনটিকে সম্পূর্ণ চার্জ করতে সময় লাগে প্রায় এক ঘন্টা ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মত।
একবার ফুল চার্জ করার পর মোবাইল ফোনটি খুবই ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে পারে। এমনিতে বেসিক ব্যবহার করে আপনি প্রায় দের দিনের বেশি ব্যাকআপ পাবেন। প্রসেসরটি পাওয়ার এফিশিয়েন্ট হওয়াতে এখানে ব্যাটারি ব্যাকআপ খুব ভালো পাওয়া যায়।
আর একটানা হেভি ইউজ করে অর্থাৎ গেম খেলে কিংবা হেভি মাল্টিটাস্টিং করে ব্যাকআপ পাওয়া যায় প্রায় ছয় থেকে সাত ঘণ্টার মতো।
Realme 9i এর পারফরমেন্স কেমন
Realme এই মোবাইল ফোনটিতে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করা করেছে android 11। এবং এখানে realme এর নিজস্ব কাস্টম ইউআই রিয়েলমি ইউ য়াই টু পয়েন্ট জিরো আছে। এই মোবাইলটিতে প্রসেসর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে Qualcomm Snapdragon 680 ।
এটি একটি অক্টা কোর প্রসেসর এবং এটি সর্বোচ্চ টু পয়েন্ট ফোর গিগা হার্জ স্পিডে রান করতে পারে। এই প্রসেসরটি ট্রানজিস্টর সাইজ মাত্র ৬ ন্যানোমিটার। জিপিইউ হিসেবে এখানে থাকছে Adreno 610।
প্রসেসরটি নতুন হলেও এখানে যে জিপিইউটি আছে তা অনেক আগের । এজন্য অনেক গেম ভালো গ্রাফিক সেটিং এ খেলা যায় না। Pubg এখানে সর্বোচ্চ ব্যালেন্স গ্রাফিক্স দিয়ে মিডিয়াম ফ্রেম রেট দিয়ে খেলা যায়।
তবে গ্রাফিক্স স্মুথ করে নিলে তখন ফ্রেম রেট হাই পাওয়া যাবে। এই সেটিং এ pubg মোটামুটি ভাবে প্লে এবল ছিল। ফ্রি ফায়ার এখানে সর্বোচ্চ আল্ট্রা গ্রাফিক্স দিয়ে, হাই ফ্রেম রেট দিয়ে খেলা যায়।
Pubg তুলনায় এখানে ফ্রি ফায়ার এর পারফরমেন্স যথেষ্ট বেশি ভালো ছিল। কল অফ ডিউটি এখানে তুলনামূলকভাবে আরো ভালো খেলা যায়। এবং অন্যান্য যত রকমের ছোটখাটো গেম আছে সবগুলো কোন সমস্যা ছাড়াই খেলা যাবে।
দৈনন্দিন কাজে এই মোবাইলটি ব্যবহার করে কোন রকমের কোন সমস্যাই পড়তে হবে না। খুবই ভালো পারফরম্যান্স দিতে পারে রেগুলার ব্যবহারে। মাল্টি টাস্কিং করার সময় খুবই স্মুথ পারফরম্যান্স পাওয়া গিয়েছে।
ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেকগুলো অ্যাপ ব্যবহার করেও তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি। এখানে র্যাম ম্যানেজমেন্ট আমরা ভালো পেয়েছি। নাইন্টি হার্জ রিফ্রেশ রেট এবং ১৮০ হার্জ টাচ স্যাম্পলিং রেট মিলে খুব ভালো লেগেছে এর পারফরমেন্স।
একটানা অনেকক্ষণ পাবজি খেলার সময় মোবাইল ফোনটিকে সামান্য গরম হতে দেখা গেছে। তবে অন্যান্য গেমগুলোতে খুব একটা গরম হয় না।
Realme 9i এর অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্য
১। Realme এখানে দিয়েছে ডিসপ্লে সেকশনে ওয়াইড ভাইন এল ওয়ান এর সাপোর্ট। এর ফলে আপনি চাইলে বিভিন্ন ওটিটি প্লাটফর্মে ফুল এইচডি তে ভিডিও দেখতে পারবেন।
২। এখানে ক্যামেরা টু এপিআই সাপোর্ট রয়েছে তাই আপনি চাইলে এখানে ম্যানুয়াল ক্যামেরা অর্থাৎ gcam ব্যবহার করতে পারবেন।
৩। সিকিউরিটি হিসেবে সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর পাশাপাশি এখানে ফেস আনলক সুবিধা পাবেন।
৪। এখানে স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ইউএফএস ২.১ ক্যাটাগরি স্টোরেজ। যা মোটামুটি ফাস্ট। ফলে ডাটা ট্রান্সফার করার সময় বেশি স্পিড পাবেন।
৫। এটি একটি ফোরজি সাপোর্টেড মোবাইল ফোন এবং এখানে ওয়াইফাই টু এবং ওয়াইফাই ফাইভ গিগা হার্ড উভয়টি সাপোর্ট করে।
৬। রিয়েল মি 9i এ ৫ ধাপের রিফ্রেশ রেট সিস্টেম করা আছে। এতে করে মোবাইলটি কখনো ত্রিশ কখনো কখনো ৪৮ কখনো ৫০ কখনো ৬০ কখনো ৯০ এ কাজ করবে যা আরো ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে সক্ষম।
৭। সর্বোচ্চ ১ টেরাবাইট পর্যন্ত এক্সটার্নাল একটি মেমোরি কার্ড এখানে সাপোর্ট করবে।
৮। সর্বোচ্চ ৫ জিবি পর্যন্ত ভার্চুয়াল র্যাম এখানে ব্যবহার করতে পারবেন। এর ফলে মাল্টি টাস্কিং এ এক্সট্রা বেনিফিট পাবেন।
Realme 9i কেনো কিনবেন
Realme 9i মোবাইলে আপনারা পাবেন ভালো একটি ডিসপ্লের পাশাপাশি ব্যালেন্স পারফরমেন্স, খুবই চমৎকার ব্যাটারি ব্যাকআপ এবং ফাস্ট চার্জিং সুবিধা। এই বিষয়গুলো যদি আপনার ডিমান্ড হয়ে থাকে তাহলে realme নাইন আই মডেলটি আপনার জন্য সেরা একটি চয়েজ হতে পারে।
Realme ইউআইটি আমাদের কাছে খুবই ভালো অপটিমাইজড মনে হয়েছে। এখানে মেজর কোন সফটওয়্যার বাগস পাবেন না। টুকটাক কিছু প্রি ইনস্টলড অ্যাপ রয়েছে, যেগুলোকে আপনি চাইলে আনইন্সটল করে দিতে পারবেন।
Realme 9i কেনো কিনবেন না
আপনি যদি একজন হেভি গেমার হয়ে থাকেন, সব সময় মোবাইলে গেম খেলে থাকেন বা ভারি কোন কাজবাজ করে থাকেন, তাহলে এই মোবাইলটি আপনার জন্য নয়। এখানে ব্যবহার করা জিপিইউ টা পুরাতন হওয়াতে গেমিং এর দিক থেকে এখানে কম্প্রোমাইজ করতে হবে।
এখানে ক্যামেরা সেকশনে কোন ধরনের আলট্রা ওয়াইড ক্যামেরা কে ব্যবহার করা হয়নি। যাদের আলট্রা ওয়াইড ক্যামেরা পছন্দ, আলট্রা ওয়াইড ক্যামেরা কে ব্যবহার করেন তারা এটি কিনবেন না।
এছাড়া রিয়েলমি এর এই মডেলটি আমাদের কাছে কিছুটা ওভার প্রাইজড লেগেছে। মার্কেটে অন্যান্য অনেক অপশন আছে যেখানে এই দামে আরো ভালো স্পেসিফিকেশন পাওয়া যায়।
সর্বশেষ মন্তব্য
আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে realme 9i মোবাইল সম্পর্কে। এখানে প্রায় সকল রকমের খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। কোন ধরনের কোন অসঙ্গতি খেয়াল করলে আমাদেরকে অবশ্যই জানাবেন।
মোবাইলটি কিনবেন কিনা তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই আবারো পোস্টটি পড়ে নিবেন। মোবাইলটিকে আপনার ভালো লাগলে তবেই কিনে ফেলবেন। কিনে ফেলার পর তখন আফসোস করার ছাড়া আর কিছু থাকবে না।
জন্য অবশ্যই ভালোভাবে বিচার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন। আজকের আর্টিকেল এ পর্যন্তই। এই রকমের আরো আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন। নিয়মিত আমাদেরকে ভিজিট করুন।