আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ১৫ হাজার টাকা বাজেট রেঞ্জে অনেকেই ফোন কিনে থাকেন। ১৫ হাজার টাকা বাজেট রেঞ্জের আশেপাশেই শাওমি নিয়ে এসেছে তাদের একটি নতুন ফোন redmi ১২ সি।
তো এই মোবাইল ফোনটি দাম হিসেবে কেমন হবে, এটি কি কি অফার করছে, এখানে স্পেসিফিকেশন হিসেবে কি কি পাবেন ইত্যাদি জানার জন্য মনোযোগ দিয়ে পড়ুন আজকের এই আর্টিকেলটি।
Redmi 12c রিভিউ দেখুন এখানে(এটিসির ভিডিও)
আরও দেখুন
Redmi 12c এর দাম কত
Xiaomi redmi 12c মডেলের এই মোবাইল ফোন দুইটি ভেরিয়েন্টে বাজারে লঞ্চ হয়েছে। এর ৪ জিবি র্যাম ও ৬৪ জিবি রম এর দাম ১৩৯৯৯ টাকা। এবং এর ৬ জিবি র্যাম ও ১২৮ জিবি রম ভেরিয়েন্ট এর দাম ১৫৯৯৯ টাকা।
Redmi 12c এর লুকিং ও ডিজাইন কেমন
Xiaomi redmi 12c মডেলের মোবাইল ফোনটি বাজারে সব মিলিয়ে চারটি কালারের পাওয়া যায়। কালার গুলোর নাম হল যথাক্রমে Graphite Gray, Ocean Blue, Mint Green, Lavender Purple।
ডিজাইনের দিক থেকে এখানে আহামরি তেমন নতুনত্ব কিছু ব্যবহার করা হয়নি। রিয়ার প্যানেল এবং বডি ফ্রেমটি প্লাস্টিকের তৈরি। পিছনে আছে একটি ক্যামেরা মডিউল যেটা স্কয়ার শেপের দেখতে।
সেখানে আছে রেডমির ব্র্যান্ডিং লোগো এবং একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। নিচের দিকে আছে প্রাইমারি মাইক্রোফোন স্পিকার গ্রিল এবং ইউএসবি পোর্ট। চার্জিং এর জন্য এই ইউএসবি পোর্ট টি একটি মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট।
উপরের দিকে আছে একটি থ্রি পয়েন্ট ফাইভ মিলিমিটার এর হেডফোন জ্যাকের পোর্ট। বামে আছে একটি সিম কার্ড ট্রে । এখানে দুইটি সিম কার্ডের পাশাপাশি একটি এক্সটার্নাল মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন। ডানে আছে ভলিউম বাটন এবং একটি পাওয়ার বাটন।
এই মোবাইলটির ব্যাকপ্যানেলটি তে টেক্সচার ব্যবহার করা হয়েছে ফলে খুব একটা ফিঙ্গারপ্রিন্ট পড়বে না। এবং নখ দিয়ে ঘষলে এক ধরনের সাউন্ড পাওয়া যায়।
মোবাইলটির ওজন ১৯২ গ্রাম। এবং এর থিকনেস হল ৮.৮ মিলিমিটার। এছাড়াও ব্যাক প্যানেল এ এক ধরনের ডোরাকাটা ডিজাইন রয়েছে যেটা অনেকটাই আকর্ষণীয়।
Redmi 12c এর ব্যাটারি কত
Xiaomi এই মডেল এর মোবাইলটিতে ব্যবহার করেছে ৫০০০ মিলি এম্পিয়ারের বড় ব্যাটারি। পাশাপাশি এখানে আছে একটি ১০ ওয়াটের চার্জার। এই দশ ওয়াটের চার্জার দিয়ে মোবাইল ফোন টিকে শূন্য থেকে ১০০ পর্যন্ত ফুল চার্জ করতে প্রায় তিন ঘন্টার বেশি সময় লাগবে।
ফুল চার্জ করার পর সাধারণ ব্যবহার করে প্রায় দেড় দিনের মতো ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায়। আর হেভি ব্যবহার করলে একটানা গেম বা মুভি দেখলে বা মাল্টিটাস্টিং করলে ছয় থেকে সাত ঘন্টার মত স্ক্রিন অন টাইম পাওয়া যায়।
Redmi 12c এর ডিসপ্লে কেমন
শাওমি এই মোবাইলটিতে ব্যবহার করেছে ৬.৭১ ইঞ্চি সাইজের বিশাল বড় একটি ডিসপ্লে। ডিসপ্লেটির রেজুলেশন এইচডি প্লাস। এটি একটি আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে। ডিসপ্লেটির পিক্সেল ডেনসিটি ২৬৮ পিপিআই।
ডিসপ্লে দিতে ব্যবহার করা হয়েছে ওয়াটার ড্রপ নচ। যা দেখতে খুব একটা ভালো ও সুন্দর মনে হচ্ছিল না অন্তত ২০২৩ সালে এসে। ডিসপ্লের রেজুলেশন কম থাকায় এখানে শার্পনেস কিছুটা কম মনে হবে। এবং ডিসপ্লেটি দেখতে কিছুটা ওয়াশড আউট।
এখানে কালার গুলোকে কিছুটা ফ্যাকাসে মনে হবে। সেটিং থেকে কালার কমবেশি করে নিলে তখন কিছুটা ভালো মনে হবে। এর অন্যান্য বিষয়গুলো ভালো ছিল।
এর সর্বোচ্চ ব্রাইটনেস 500 নিটস পর্যন্ত থাকাতে সরাসরি আউটডোরে সূর্যের আলোতে সামান্য সমস্যা হতে পারে। তবে ইনডোর কন্ডিশনে কোন রকমের সমস্যায় পড়বেন না।
Redmi 12c এর ক্যামেরা কেমন
Redmi 12c মডেলে ব্যবহার করা হয়েছে ব্যাক প্যানেলে ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ। মেইন সেন্সরটি ৫০ মেগাপিক্সেলের। অন্যটি ০.০৮ মেগাপিক্সেলের একটি ডেপথ সেনসর। মেইন ক্যামেরাটি f 1.8 অ্যাপাচারের।
মেইন ক্যামেরাটির ছবিগুলো দাম হিসেবে অনেক ভালো মনে হয়েছে। ডায়নামিক রেঞ্জ ছিল এভারেজ। এবং এর ক্যামেরার ছবিগুলো হালকা স্যাচুরেশন বাড়িয়ে দেয় যার জন্য দেখতে ভালো লাগে।
রাতের বেলা ছবি খুব একটা ভালো আসে না ছবিতে প্রচুর পরিমাণে নয়েজ দেখা যায়। তবে নাইট মোড দিয়ে ছবি তোলার সময় কিছুটা ভালো ফলাফল আসে।
পোট্রেট মোডের ছবিগুলো ছিল এভারেজ। মোবাইলটির সামনে ব্যবহার করা হয়েছে ৫ মেগাপিক্সেলের একটি সেলফি শুটার। ছবিতে প্রচুর পরিমাণে শারপনেসের অভাব খেয়াল করবেন।
ছবিগুলো খুব একটা ভালো লাগবে না আপনার। পাঁচ মেগাপিক্সেলের হাওয়াতে ডিটেলস অনেক কম। সামন ক্যামেরার অ্যাপাচার f 2.4।
সামন এবং পিছন উভয় ধরনের ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও রেকর্ড করা যায় সর্বোচ্চ ১০৮০ মেগাপিক্সেল এবং ৩০ fps। ভিডিও করার সময় ভিডিও গুলো খুব বেশি স্টেবিলাইজ হয় না। এজন্য শক্ত হাতে ভিডিও করতে হবে।
Redmi 12c এর পারফরমেন্স কিরকম
রেডমির এই ফোনটিতে এন্ড্রয়েড সিস্টেম হিসেবে আছে অ্যান্ড্রয়েড টুয়েলভ। এবং সফটওয়্যার হিসেবে আছে শাওমির নিজস্ব কাস্টম ইউ আই এমআইইউআই ১৩। মোবাইলের প্রসেসর হিসেবে আছে MediaTek Helio G85।
এই প্রসেসর টি একটি অক্টা কোরের প্রসেসর এবং এটি সর্বোচ্চ টু পয়েন্ট জিরো গিগা হার্জ স্পিডে রান করতে পারে। প্রসেসরটির ট্রানজিস্টর সাইজ ১২ ন্যানোমিটার। জিপিইউ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে Mali-G52 MC2।
মিডিয়াটেক এর পক্ষ থেকে এই প্রসেসরটি এর দাম বিবেচনায় যথেষ্ট পরীক্ষিত এবং ভালো একটি প্রসেসর। অনেকেই এটিকে গেমিং প্রসেসর মনে করে আসলে এটি খুব বেশি হেভি গেমিং এর জন্য উপযুক্ত না।
যত রকমের সাধারণ কাজকর্ম আমরা মোবাইল ফোন দিয়ে করি তা খুব সহজেই এই প্রসেসরটি হ্যান্ডেল করতে পারছিল। অ্যাপ ওপেনিং এবং ক্লোজিং টাইম ছিল ডিসেন্ট। মাল্টি টেস্টিং করার সময় খুব বেশি ল্যাগ চোখে পড়েনি। তবে এখানে যদি শাওমির ইউআই টি হালকা করা হতো তাহলে নিঃসন্দেহে আরো ভালো পারফরম্যান্স দেখা যেত।
শাওমির ইউ আই অনেক বেশি ভারী হওয়াতে কম দামি মোবাইল গুলোতে খুব একটা অপটিমাইজড মনে হয় না। তবে এখানে খুব বড় রকমের সফটওয়্যার বাগস পাবেন না। এই মোবাইল ফোনটি দিয়ে এই প্রসেসরের সাথে মোটামুটি মানের গেমিং পারফরম্যান্স পাবেন।
নরমাল যতগুলো গেম আছে সবগুলো কোন সমস্যা ছাড়াই খেলতে পারবেন। তবে ভারী গেম যেমন pubg লম্বা সময় খেলার সময় এখানে টুকটাক ফ্রেম ড্রপ খেয়াল করবেন। ৪ জিবি এর ভার্সনটি দিয়ে খেলার সময় আরো বেশি ফ্রেম ড্রপ পাবেন।
পাবজী এখানে সর্বোচ্চ এইচডি গ্রাফিক্স এবং এই এইচডি গ্রাফিক্স দিয়ে খেলার সময় সর্বোচ্চ হাই ফ্রেম রেট সাপোর্ট করে। গ্রাফিক্স কমিয়ে স্মুথ কিংবা মিডিয়ামে দিলে ফ্রেম রেট আলট্রা পর্যন্ত পাওয়া যায়। গ্রাফিক্স কমিয়ে খেলে তখন ভালোভাবে খেলা যায় এবং তুলনামূলকভাবে স্টাবল পারফরম্যান্স পাওয়া যায়।
কল অফ ডিউটি ,ই-ফুটবল, ফ্রি ফায়ার ইত্যাদি গেম তুননামুলোকভাবে বেশি অপটিমাইজ হওয়াতে এগুলো গেমে ভালো পারফরমেন্স পাবেন পাব্জির থেকে। ফ্রী ফায়ার আল্ট্রা গ্রাফিক্স দিয়ে হাই ফ্রেম রেটে খেলতে পারবেন। শ্যাডো অফ করে খেললে আরো লম্বা সময় ধরে ভালো পারফরম্যান্স পাবেন।
Redmi 12c এর অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্য
১। শাওমি রেডমি 12c মোবাইল ফোনটি ডুয়েল ফোরজি সাপোর্ট করে।
২। এখানে ডুয়েল ওয়াইফাই ব্যান্ড অর্থাৎ টু গিগাহার্জ এবং 5 গিগাহার্জ উভয়টি সাপোর্ট করে।
৩। এখানে ওটিজি সাপোর্ট আছে। পাশাপাশি পাবেন ফেস আনলক এর সুবিধা।
৪। এটা ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেনসরটি ফাস্ট এবং একুরেট। কিন্তু সামান্য এনিমেশন ডিলে আছে। তবে এর পজিশনটি উপরের দিকে হওয়ায় প্রথম প্রথম অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে।
৫। এখানে ইএমএমসি 5.1 ক্যাটাগরি স্টোরেজ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি অনেকটা পুরাতন টেকনোলজি হওয়াতে ডাটা ট্রান্সফার করার সময় খুব বেশি স্পিড পাওয়া যাবে না।
৬। শাওমি রেডমি 12c মোবাইলটিতে আপনারা সর্বোচ্চ ওয়ান টেরাবাইট পর্যন্ত এক্সটার্নাল মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।
৭। এখানে ৫ জিবি পর্যন্ত ভার্চুয়াল র্যাম ব্যবহার করতে পারবেন। যা মাল্টিটাসকিং করার সময় সামান্য সাপোর্ট দেবে।
Redmi 12c কেনো কিনবেন
শাওমি রেডমি 12c মডেলের নতুন স্মার্টফোনটি একটি এন্ট্রি টু মিড বাজেটের মোবাইল ফোন। এর ভালো দিকগুলোর মধ্যে আছে ভালো ক্যামেরা ,ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ, সুন্দর ডিজাইন এবং শাওমি কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু।
নিয়মিতভাবে বেশি বেশি ছবি তোলেন, টুকটাক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন এবং আপনার একটি সেকেন্ডারি মোবাইল ফোন প্রয়োজন অথবা আপনি আপনার পরিবারের বয়স্ক কোনো সদস্যকে একটি মোবাইল ফোন দিতে চান ভালো ব্র্যান্ডের তাহলে এই মোবাইল ফোনটি আপনি নিতে পারেন। পাশাপাশি এই রকমের বাজেট থেকে যারা গেমিং করতে পছন্দ করেন তারাও নিতে পারেন।
Redmi 12c কেনো কিনবেন না
শাওমি রেডমি 12c মোবাইলের অনেকগুলো কমতির বিষয় আছে যেজন্য আপনি হয়তো এটি কিনবেন না। এরকম বাজেটে যখন অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলো আলট্রা ওয়াইড ক্যামেরা দেয় সেখানে শাওমি কোন রকমের আলট্রা ওয়াইড ক্যামেরা এই মডেলটিতে দেয়নি।
এখানে কোন রকমের সেকেন্ডারি নয়েজ ক্যান্সলেশন মাইক নেই। এবং সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হল ২০২৩ সালে এসেও এই মোবাইলে আমরা দেখতে পাই মাইক্রো ইউ এস বি চার্জিং পোর্ট। যে বিষয়টি অনেকের বায়িং ডিসিশনকে পরিবর্তন করে দিতে পারে।
অন্যান্য অনেক ব্র্যান্ডের ফোনে আমরা এই বাজেটে ফুল এইচডি ডিসপ্লে দেখতে পারি। এখানে শুধু এইচডি প্লাস ডিসপ্লে হওয়ায় শার্পনেস এর ঘাটতি চোখে পড়বে যদি আপনি আগে কখনো ফুল এইচডি কোনো ডিসপ্লে ব্যবহার করে থাকেন।
তবে এখানে যদি ফুল এইচডি ডিসপ্লে ব্যবহার করা হতো তাহলে পারফরম্যান্স কিছুটা আরো কম পাওয়া যেত বেশি ডিসপ্লের পিক্সেল কে হ্যান্ডেল করতে গিয়ে। সে হিসেবে মানা গেলেও এখানে নাইন্টি হারজ রিফ্রেশ রেট অবশ্যই দিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।
এর পিছনের ক্যামেরাটি সুন্দর হলেও ফ্রন্ট ক্যামেরা রেজুলেশন কম হয় ছবিতে ডিটেইলস কম আসে এজন্য যারা সেলফি লাভার তারা এটি কিনবেন না। এখানে মাত্র ১০ ওয়াটের চার্জার থাকায় চার্জ করতে অনেক সময় লাগে। যেখানে অন্যান্য অনেক ব্রান্ড ১৮ ওয়াট পর্যন্ত চার্জিং সাপোর্ট দেয়। কোনো কোনো ব্র্যান্ড কে 33 ওয়াট পর্যন্ত এই বাজেট থেকে ফাস্ট চার্জার দিতে দেখা গেছে।
সর্বশেষ মন্তব্য
মোবাইল ফোনটির দাম যদি 2000 টাকার মতো কম হতো তাহলে এটি অবশ্যই খুব ভালো কম্পিটিশন করতে পারত অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলোর সাথে। তাই এই মোবাইল ফোনকে কিনবেন কিনা ডিসাইড করার আগে অবশ্যই ভালো ভাবে আবারো পোস্টটি পড়ে নেবেন।
এর খারাপ দিক এবং ভালো দিক উভয় দিক বিবেচনা করে আপনার সাথে মোবাইল ফোনটি যায় কিনা, আপনি এটিকে পছন্দ করেছেন কিনা ইত্যাদি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন।
আমাদের সমস্ত তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। কোন ধরনের ভুল ত্রুটির খেয়াল হলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন অথবা সাপোর্ট মেইলে যোগাযোগ করবেন। এরকমের আরো আর্টিকেল পাওয়ার জন্য নিয়মিত আমাদেরকে ভিজিট করুন।