আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আজকের এই আর্টিকেলে realme c55 এর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। দাম বিবেচনায় এই ফোনটি কিনবেন কিনা তা জানার জন্য পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
Realme c55 এর দাম কত
Realme c55 দেশের বাজারে অফিশিয়াল ভাবে দুইটি ভেরিয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে। এর ৬/১২৮ জিবি ভেরিয়েন্টের দাম ১৯,৯৯৯ টাকা। এবং এর ৮/২৫৬ জিবি ভেরিয়েন্টের দাম ২৩,৯৯৯ টাকা।
আরও দেখুন
realme c55 price | গরিবের আইফোন | রিয়েলমি ফোনের দাম
Realme c55 এর লুকিং ও ডিজাইন কেমন
Realme c55 মোবাইল ফোনটি সর্বমোট তিনটি কালার ভেরিয়েন্ট এ পাওয়া যায়। একটি নাম Sun Shower এবং অন্য দুইটি কালারের নাম Rainy Night ও Rainforest।
Rainforest color টি খুব অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়।
এটি অনেকটা দেখতে ফ্লাট শেপের আইফোনের মত। ব্যাক প্যানেলটি কালার রিফলেক্ট করে এবং এটি দেখতে খুবই সুন্দর। এই ডিজাইন প্রায় সকল মানুষকেই ভালো লাগবে বলে আমরা মনে করি। পিছনে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। এর বডি ফ্রেমটিও প্লাস্টিকের তৈরি।
ডিসপ্লেতে প্রটেকশন হিসেবে কোনো ধরনের গ্লাসের উল্লেখ কোথাও পাওয়া যায়নি। তাই একটি স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করার পরামর্শ থাকলো। এর পেছনে আছে ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ এবং এগুলো দেখতে কিছুটা বড়। ফলে এর লুকস আরো বেশি সুন্দর মনে হবে।
মোবাইলটির নিচে আছে টাইপ সি ইউ এস বি চার্জিং পোর্ট, প্রাইমারি মাইক্রোফোন, স্পিকার গ্রিল এবং 3.5 মিলিমিটার এর হেডফোন জ্যাকের পোর্ট। উপরের দিকে কিছু নেই। আমি আছে সিম কার্ড ট্রে।
সিম কার্ড ট্রেতে ডুয়েল ন্যানো সিমের পাশাপাশি একটি মেমোরি কার্ড ব্যবহার করা যাবে। ডানে আছে ভলিউম বাটন এবং পাওয়ার বাটন। পাওয়ার বাটনটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর হিসেবে কাজ করে।
এর ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি খুবই ফাস্ট এবং একুরেট ফলাফল দেয়। টাচ করার সাথে সাথেই কোন ধরনের ডিলে করে না প্রায় সাথে সাথেই আনলক করে দিতে পারে।
Realme c55 এর ডিসপ্লে
Realme c55 এর ব্যবহার করা হয়েছে ৬. ৭২ ইঞ্চি সাইজের বিশাল একটি ডিসপ্লে। ডিসপ্লেটির রেজুলেশন ফুল এইচডি প্লাস। এবং এর পিক্সেল ডেন্সিটি ৩৯২ পিপিআই। এতে আরও আছে ৯০ হার্জ রিফ্রেশ রেট এর সাপোর্ট। পাশাপাশি ১৮০ হার্জ টাচ স্যাম্পলিং রেট।
এটি একটি আইপিএস এলসিডি প্যানেলের ডিসপ্লে। এখানে ৬৮০ নিটস পর্যন্ত ব্রাইটনেস পাবেন। এজন্য দিনের আলোতে ব্যবহার করতে খুব একটা সমস্যা হবে না । ডিসপ্লেটির কালার একুরেসি প্রায় ন্যাচারাল। ডিসপ্লে টি যথেষ্ট ভাইব্রেনট। এতে কনটেন্ট ওয়াচিং করে অনেক বেশি ভালো লাগবে।
ডিসপ্লের টিতে আছে পাঞ্চ হোল কাট আউট এর ক্যামেরা। ডিসপ্লেটিভ চিন এবং বেজেল এরিয়া দাম হিসেবে মেনে নেওয়ার মতই বলা যায়। ডিসপ্লেটিতে টাচ রেসপন্স জনিত কোন ধরনের ইস্যু পাওয়া যায়নি। আশা করছি ডিসপ্লেটি দাম অনুযায়ী আপনাদের সকলেরই ভালো লাগবে।
Realme c55 এর ক্যামেরা
Realme c55 এর পিছনে ব্যবহার করা হয়েছে দুইটি ক্যামেরা। মূল সেনসরটি ৬৪ মেগাপিক্সেলের। এবং এর অ্যাপাচার f1.8। অন্যটি দুই মেগাপিক্সেলের f 2.4 অ্যাপাচার এর একটি ডেপথ সেনসর।
মেইন ক্যামেরার ছবিগুলো দিনের আলোতে খুব ভালোভাবেই শারপনেস এবং ডিটেইলস ধরে রাখতে পারছিল। ডায়নামিক রেঞ্জ ছিল ভালোর কাতারে। অবজেক্ট কে খুব সহজেই ফোকাস করা যাচ্ছিল। এবং পোর্ট্রেট মোডে ছবি তোলার সময় খুব ভালোভাবেই কিনারা গুলোকে চিহ্নিত করতে পারছিল এবং ব্যাকগ্রাউন্ড কে ভালোভাবেই ব্লার করতে পারছিল।
রিয়েলমিতে আমরা খেয়াল করি ছবিগুলোকে ন্যাচারাল থেকে সামান্য বেশি কালার বুস্ট করে। এটি অনেকেই অপছন্দ করতে পারেন তবে ছবিগুলো দেখতে খুবই ভালো লাগে। নতুন করে এডিট করে কালার বাড়াতে হয় না। একদম সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহার করার মত ছবি পাবেন।
এই মোবাইলটির সামনে ব্যবহার করা হয়েছে f 2.0 অ্যাপাচারের একটি ৮ মেগাপিক্সেলের সেলফি শুটার। সামনের ক্যামেরার ছবিগুলোও কালার বুষ্টিং করে ফেলে। দিনের আলোতে এখানেও খুবই ভালো ছবি পাওয়া যায় তবে চেহারাগুলোকে একটু সফট করে ফেলে। যেমনটা আমরা প্রায় সমস্ত রিয়েলমি ফোনেই দেখতে পাই।
সামনে ক্যামেরার পারফরমেন্স ৮ মেগাপিক্সেল হিসেবে বেশ ভালো রকমের বলা চলে। উভয় ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও রেকর্ড করা যাবে 1080 পিক্সেলে 30 fps এ। ভিডিও কোয়ালিটি ছিলো এভারেজ।
Realme c55 এর পারফরমেন্স
Realme c55 এর অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এন্ড্রয়েড ১৩। এবং এতে ইউ আই হিসেবে আছে realme ইউ আই ৪.০। প্রসেসর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে MediaTek Helio G88।
এটি একটি অক্টা কোর এর প্রসেসর। এবং এর সর্বোচ্চ স্পিড 2.0 গিগা হার্জ। এই প্রসেসরটির ট্রানজিস্টর সাইজ ১২ ন্যানোমিটার। এখানে জিপিও হিসেবে আছেMali-G52 MC2।
রেগুলার যে সমস্ত কাজ আমরা মোবাইল ফোন দিয়ে করি যেমন: ফেসবুক ব্যবহার করা ,ইউটিউব দেখা, ভিডিও কল করা কিংবা টুকটাক মাল্টি টাস্কিংয়ের কাজ এই মোবাইল ফোনটি এই প্রসেসর এর সাহায্যে খুব সহজেই করতে পারছিল। কোন ধরনের কোন রকমের সমস্যা ছাড়াই। এবং এর র্যাম ম্যানেজমেন্ট ও যথেষ্ট ভালো।
৮ জিবি র্যাম এর ভার্সনটিতে আপনারা আরও বেশি মাল্টি টাস্টিং করতে পারবেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে কয়েকটি অ্যাপ একসাথে নিয়ে কাজ করার সময় হঠাৎ করে কোন অ্যাপকে ক্রাশ করতে দেখিনি।
গেমিং এর কথা বলতে গেলে এটি কোন গেমিং ফোন নয়। একজন সাধারণ ইউজার শখের বসে যদি গেম খেলে থাকেন কিংবা আপনি দিনে অল্প কিছু সময় গেম খেলেন তাহলে খুব ভালো রকমের সাপোর্ট পাবেন। ছোটখাটো সকল গেম কোন সমস্যা ছাড়াই খেলা যায়।
তবে হেভি গেমিং এর কথা বলতে গেলে যেমন পাবজি টাইপের গেম খেলার সময় একটানা খেলতে গিয়ে মোবাইল ফোনটি হিট হয়। এবং তখন পারফরম্যান্স কিছুটা ড্রপ করে। Pubg এখানে আপনারা সর্বোচ্চ এইচডি গ্রাফিক্স এ খেলতে পারবেন।
এইচডি গ্রাফিক্স দিয়ে খেলার সময় ফ্রেম রেট সর্বোচ্চ হাই পর্যন্ত দিতে পারবেন। তবে গ্রাফিক্স কিছুটা কমিয়ে নিলে ultra ফ্রেম rate অর্থাৎ ৪০ এফপিএসে খেলতে পারবেন। Pubg মোটামুটি ভাবে প্লে করা যায়।
কল অফ ডিউটি লোগ্রাফিক্স সেটিং এ বেশ ভালোভাবেই খেলতে পারবেন। কল অফ ডিউটি গেমটি অপটিমাইজ হওয়াতে এখানে খুব ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যায়। ফ্রী ফায়ার এখানে আল্ট্রা গ্রাফিক্স দিয়ে হাই ফ্রেম রেটে খেলতে পারবেন।
শ্যাডো অফ করে খেললে লম্বা সময় ধরে ভালো পারফরমেন্স পাওয়া যাবে। সবকিছু যদি সর্বোচ্চ দিয়ে খেলেন তাহলে ফোনটি তাড়াতাড়ি গরম হবে এবং তখন কিছুটা পারফরম্যান্স কম মনে হবে। অন্যান্য গেমগুলি মিডিয়াম গ্রাফিক্সে খুব ভালোভাবেই খেলতে পারবেন।
গেম খেলার সময় এর ভার্চুয়াল মেমোরিটি অন করে দিতে পারেন তাহলে খুব সামান্য পারফরম্যান্স ভালো আসবে। এছাড়া মোবাইল ডাটা দিয়ে ভিডিও দেখা বা গেম খেলতে গেলে একটু বেশি তাড়াতাড়ি হিট হয়।
Realme c55 এর ব্যাটারি কত
Realme c55 এর ব্যবহার করা হয়েছে পাঁচ হাজার মিলি এম্পিয়ারের ব্যাটারি। এবং সাথে থাকছে ৩৩ ওয়াটের ফাস্ট চার্জার। এতে ৩৩ ওয়াটের চার্জার দিয়ে মোবাইলটিকে ফুল চার্জ করতে প্রায় এক ঘণ্টার মতো সময় লাগছিল।
একবার ফুল চার্জ করার পর বেসিক বা নরমাল ব্যবহার করে প্রায় দেড় দিনের মতো ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায়। এবং একটানা হেভি ইউজ করে অর্থাৎ গেমিং করে কিংবা মুভি দেখে বা মাল্টিটাস্টিং করে ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায় প্রায় ছয় ঘণ্টার মতো।
আপনার ব্যবহার অনুযায়ী এর ব্যাকআপ নির্ভর করবে। ব্যবহারের সময় আপনি কি ধরনের আবহাওয়াতে ব্যবহার করছেন ব্রাইটনেস কত বেশি বা কম দিয়ে ব্যবহার করছেন এবং আপনি সাউন্ড কি পরিমাণ দিয়ে শুনছেন ইত্যাদির ওপর ব্যাটারির ব্যাকআপ নির্ভর করে।
Realme c55 এর অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্য
১। Realme c55 এর ডিসপ্লে তে আপনারা ওয়াইড ওয়ান এল ওয়ান এর সাপোর্ট পাবেন। এর ফলে অনলাইন স্ট্রিমিং ফুল এইচডিতে করতে পারবেন।
২। এই মোবাইলের ক্যামেরা তে ক্যামেরা টু এপিআই এনাবেল অবস্থায় পাবেন ফলে আপনারা চাইলে এখানে google ক্যামেরাও ব্যবহার করতে পারবেন।
৩। মোবাইলটির স্পিকার পারফরমেন্স আমাদের কাছে বেশ ভালই মনে হয়েছে। ফুল ভলিউমেও খুব একটা ডিসটরশন বা ফাটাফাটা আওয়াজ পাওয়া যায় না।
৪। এই মোবাইলটি ডুয়েল ব্যান্ড ওয়াইফাই সাপোর্ট করে।
৫। এখানে আছে ওটিজি সাপোর্ট এবং এনএফসি সুবিধা।
৬। এক্সটার্নাল মেমোরি কার্ড হিসেবে আপনারা সর্বোচ্চ ১ টেরাবাইট পর্যন্ত মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।
৭। রিয়েলমি c৫৫ মোবাইলটিতে ভার্চুয়াল র্যাম সর্বোচ্চ 8gb পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন।
৮। এখানে চার্জিং এর সময়ে ডায়নামিক আইল্যান্ড দেখাবে যা অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলোতে প্রথমবার ব্যবহার করা হয়েছে।
Realme c55 কেন কিনবেন
Realme c55 এর সবথেকে আকর্ষণীয় যে জায়গাটা আমরা মনে করি তা হচ্ছে ডিজাইন। একে গরিবের আইফোনের মত ট্যাগ দেওয়াই যায়। এটি দেখতে খুবই স্টাইলিশ। ফোনটাকে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যাওয়ার মত।
তবে শুধু দেখতে ভালো হলেই তো হয় না এর মাঝে আরো কিছু ভালো দিক আছে। যেমন এর ক্যামেরাটা মোটামুটি মানের ভালই এইরকম দাম থেকে। পাশাপাশি এর পারফরম্যান্স এভারেজ টাইপের। আপনারা যদি শখের গেমার হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে হতাশ করবে না।
এর চার্জ ব্যাকআপ অত্যন্ত ভালো। পাশাপাশি রিয়েলমির ক্লিন ইউ আই ব্যবহার করে আপনারা বেশ মজা পাবেন। তেমন ধরনের সফটওয়্যার কোন বাগস পাবেন না। তেত্রিশ ওয়াটের ফাস্ট চার্জার থাকায় খুব তাড়াতাড়িও মোবাইলটি চার্জ হয়ে যায়।
Realme c55 কেন কিনবেন না
Realme c55 মোবাইল ফোনটি প্রায় বিশ হাজার টাকা দামের হলেও এখানে কোন ধরনের সেকেন্ডারি নয়েস ক্যানসেলেশন মাইক্রোফোন ব্যবহার করা হয়নি। এখানে কোন রকমের আল্ট্রা ওয়াইড ক্যামেরা নেই।
যাদের আলট্রা ওয়াইড ক্যামেরা প্রয়োজন হয় তারা এটি পাবেন না এই মোবাইলটিতে। এজন্য আপনারা এই বাজেটের অন্যান্য অপশন গুলো দেখতে পারেন। পিছনের ক্যামেরাটি ভালো হলেও ফ্রন্ট ক্যামেরার রেজুলেশন দাম হিসেবে অনেক কম মনে হয়েছে।
এখানে অন্তত ১৩ বা ১৬ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দেওয়া উচিত ছিল। এখানে জাইরস্কপ সেন্সর টি সফটওয়্যার বেইজড হওয়ায় যাদের জাইরস্কপ ব্যবহার করে গেম খেলার অভ্যাস আছে তারা খুব ভালো সাপোর্ট পাবেন না।
এখানে এফএম রেডিও এর কোন সাপোর্ট নেই। ক্যামেরা বাম্প বড় হওয়ার কারণে অনেকের কাছেই খারাপ লাগতে পারে। ফ্ল্যাট শেপ ডিজাইন এর জন্য হতে ধরে অনেকেই আনকমফোর্ট অনুভব করবেন।
অবশেষে বলা যায়, realme c55 মোবাইল ফোনটি ২০ হাজার টাকার নিচের বাজেটে কেনার জন্য একটি অন্যতম সেরা ফোন। তবে এর খারাপ দিকগুলো অবশ্যই দেখে আপনার সাথে যায় কিনা ইত্যাদি ব্যাপার ভালোভাবে চিন্তা করে মোবাইল ফোনটি কিনবেন।