আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ৷ শাওমি বাংলাদেশের খুবই জনপ্রিয় একটি ব্রান্ড। ২০ হাজার টাকা বাজেটে এর নোট সিরিজের ফোন গুলিকে জাতীয় স্মার্টফোন বলে থাকেন অনেকে। আজকে তেমনই একটি ফোন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এই আর্টিকেলে৷ আজকের আলোচনা যাকে ঘিরে তার মডেল নাম রেডমি নোট ১২৷ রেডমি শাওমির একটি সাবব্রান্ড হিসাবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে কাজ করছে৷
রেডমি নোট ১২ এর দাম
রেডমি নোট ১২ মোবাইলটি বাংলাদেশে অফিশিয়ালভাবে শুধু একটি ভ্যারিয়েন্ট এ লঞ্চ হয়েছে৷ ৪ জিবি র্যাম ও ১২৮ জিবি ইন্টারনাম মেমোরি নিয়ে মোবাইলটি দেশের সকল স্থানে পাওয়া যাচ্ছে ১৯৯৯৯ টাকায়৷
তবে আন অফিশিয়ালভাবে এর ৪/৬৪ জিবি, ৬/১২৮ জিবি ও ৮/১২৮ জিবি বিভিন্ন যায়গায় পাওয়া যায়৷ সেগুলোর প্রাইস কখনোই স্টাবল না৷ চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়। অফিশিয়ালের থেকে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা কমে পাওয়া যেতে পারে আবার চাহিদা বেশি থাকলে বেশি দামে কিনতে হবে৷
যারা আন অফিশিয়াল ভ্যারিয়েন্ট কিনতে চাচ্ছেন তারা অবশ্যই ট্রাস্টেড শপ গুলোতে যোগাযোগ করবেন৷ আন অফিশিয়াল না কেনারই সাজেশন থাকবে কারন এই ফোন গুলোতে অনেকেই বিভিন্ন সমস্যা ফেস করেন৷ সেসব নিয়ে আরেকদিন অন্য কোনো পোস্টে কথা হবে৷ এজন্য নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন৷
রেডমি নোট ১২ এর লুকিং
রেডমি নোট ১২ মোবাইল ফোনটি মোট ৩ টি কালার ভ্যারিয়েন্টে দেশের বাজারে পাওয়া যায়৷ একটির নাম Onyx Gray এবং অন্য দুইটি কালার ভ্যারিয়েন্টের নাম যথাক্রমে Mint Green এবং Ice Blue। রেডমি নোট ১২ এর ডিজাইন ফ্লাট শেপের।
এর ডিস্পেলে প্রোটেকশন হিসাবে আছে কর্নিং গরিলা গ্লাস ৩ এর প্রোটেকশন৷ ব্যাক প্যানেলটি প্লাস্টিকের তৈরি। এর উপরের সাইডে আছে আই আর ব্লাস্টার, সেকেন্ডারি নয়েস ক্যান্সেলেশন মাইক এবং ৩.৫ মি.মি. এর হেডফোন জ্যাকের পোর্ট৷ নিচের দিকে আছে মেইন স্পিকার, প্রাইমারী মাইক এবং ইউএসবি টাইপ সি চার্জিং পোর্ট৷ বামে আছে সিম কার্ড ট্রে এবং এখানে ২ টি সিমের পাশাপাশি একটি মেমোরি কার্ড ব্যবহার করার সুবিধা। ডানে পাবেন ভলিউম বাটন এবং পাওয়ার বাটন৷
এই পাওয়ায় বাটনটিতেই ইম্পিলিমেন্ট করা হয়েছে সাইড মাউন্টেড ফিংগার প্রিন্ট সেন্সর৷ ফিংগার প্রিন্ট এর একুরেসি এবং কার্যকারিতা ছিলো খুবই ফাস্ট৷ এই ব্যাক প্যানেল এ একটি স্কয়ার শেপের ক্যামেরা বাম্প আছে এবং এই ক্যামেরা বাম্পটি হালকা রাউন্ড দেখতে৷
মোবাইলটির থিকনেস ৭.৯ মি.মি. এবং এর ওজন প্রায় ১৮৩ গ্রাম৷ ফ্লাট শেপের হলেও ফোনটি ধরতে কোনো ধরনের সমস্যা হয় না এবং এটিকে এক হাতে বেশ ভালো ভাবেই আরামদায়ক ভাবে ব্যবহার করা যায়৷
রেডমি নোট ১২ এর ডিস্পেলে
রেডমি নোট ১২ এ ডিস্পেলে হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ৬.৬৭ ইঞ্চির একটি ফুল এইচ ডি প্লাস অ্যামোলেড ডিসপ্লে। যার রেজুলেশন 1080 x 2400 পিক্সেল। ডিসপ্লের পিপিআই ৩৯৫। এতে আছে ১২০ হার্জের রিফ্রেশ রেট এবং ১২০০ নিটস পিক ব্রাইটনেস।
এর ফলে সূর্যের আলোতে ব্যবহার করতে কোনো ধরনের কোনো সমস্যা পাবেন না। ভালোভাবেই সবকিছু দেখতে পারবেন।
ডিসপ্লের চিন এবং বেজেল প্রাইস হিসাবে ভালোই লাগবে এবং ডিসপ্লের উপরে আছে পাঞ্চ হোল কাটআউট এর ক্যামেরা। এছাড়া ডিসপ্লে তে রয়েছে ওয়াইডভাইন এল ওয়ান এর সাপোর্ট। ফলে নেটফ্লিক্স সহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম এ ফুল এইচ ডি তে ভিডিও স্ট্রিম করতে পারবেন।
রেডমি নোট ১২ এর ক্যামেরা
রেডমি নোট ১২ এর রেয়ারে আছে ট্রিপল সেটাপের ক্যামেরা৷ যার মেইন সেন্সরটি ৫০ মেগাপিক্সলের এবং এতে সেন্সর হিসাবে আছে স্যামসাং এর JN1 সেন্সর৷ ক্যামেরার অ্যাপাচার f ১.৮। আরেকটি ক্যামেরা ৮ মেগাপিক্সেলের f ২.২ এর আল্ট্রা ওয়াইড ক্যামেরা৷ এবং এখানে সেন্সর হিসাবে আছে অম্নিভিশন ডি ১০ সেন্সর৷ এবং সবশেষ ক্যামেরাটি হলো ২.৪ অ্যাপাচারের একটি ডেপথ সেন্সর ক্যামেরা৷
দিনের আলোতে ছবি তোলার সময় মেইন ক্যামেরা খুব ভালোভাবে ফোকাস নিতে পারছিলো এবং ছবিগুলোকে খুব ভালোভাবে তুলতে পারছিলো। কোনো ধরনের শাটার ডিলেও পাওয়া যায় নি৷ এর পোট্রেট মোডের এজ ডিটেকশন খুবই চমৎকার ছিলো এবং ব্যাক গ্রাউন্ড ব্লারিং ও স্বাভাবিক ছিলো। আল্ট্রা ওয়াইড এর ছবিগুলো ভালো কালারফুল ছিলো এবং উভয় ক্যামেরায় ছবিগুলো দেখতে খুবই উজ্জ্বল ছিলো৷
রেডমি নোট ১২ এর ফ্রন্ট এ আছে ২.৪ অ্যাপাচারের ১৩ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা৷ এর সেলফি ক্যামেরা টিও ভালো ছবি তুলতে পারে৷ ছবিগুলো অনেকটাই কালারফুল এবং যথেষ্ট ভাইব্রেন্ট। তবে লাল রঙকে একটু বেশিও বুস্ট করে৷ দাম অনুযায়ী সেলফি ক্যামেরাটি সবার কাছেই আশা করছি ভালো লাগবে। উভয় ক্যামেরাতেই ১০৮০ পিক্সেলের ভিডিও শুট করা যাবে তবে হালকা শেকি শেকি ফিল পাবেন৷ তাই শক্ত হাতে ভিডিও করতে হবে৷
রেডমি নোট ১২ এর পার্ফরমেন্স
রেডমি নোট ১২ এ ব্যবহার করা হয়েছে স্নাপড্রাগন ৬৮৫ সিস্টেম অন চিপ৷ প্রসেসরটির ট্রানজিন্টর এর সাইজ মাত্র ৬ ন্যানোমিটার। এটি সর্বোচ্চ ২.৮ গিগা হার্জে চলতে পারে৷ এতে জিপিইউ হিসাবে আছে এন্ড্রিনো ৬১০।
রেডমি নোট ১২ মোবাইলে রেগুলার যত রকমের কাজ আছে যেমন ইন্টারনেট ব্রাউজ করা, ইউটিলিটি ভিডিও দেখা, সোশাল মিডিয়া চালানো ইত্যাদিতে কোনো ধরনের কোনো সমস্যা ফেস করি নি৷ অর্থাৎ দৈনন্দিন কাজ আপনাকে খুব ভালোভাবে সাপোর্ট দিতে পারবে৷
গেমিং পার্ফরমেন্স এর কথা বলতে গেলে এটি কিছু হেভি গেম যেমন পাবজিতে ব্যালেন্স গ্রাফিক্স এবং মিডিয়ার ফ্রেম রেটে খেলা যায়৷ এখানে জিপিইউটি পুরাতন হওয়ায় গেমগুলো ভালো গ্রাফিক্স পাওয়া যায় না৷ প্রসেসর ভালো এবং লেটেস্ট হলেও শুধু গ্রাফিক্স সেকশনে পিছিয়ে থাকবে এই মোবাইল ফোন৷ ফ্রি ফায়ার বেশ ভালো ভাবেই খেলা যায় তুলনামূলক হালকা গেম হওয়াতে। ৬০ এফপিএস এবং আল্ট্রা গ্রাফিক্স সেটিং এ কোনো ধরনের কোনো মেজর সমস্যা পাওয়া যায় নি৷ কল অফ ডিউটি ভালোভাবে খেলা গেলেও গ্রাফিক্স আশানুরূপ পাওয়া যায় নি৷ ই-ফুটবল ৬০ এফপিএস এ মিডিয়াম সেটিং এ ভালোভাবে খেলা যাচ্ছিলো।
রেডমি নোট ১২ এর ব্যাটারি
রেডমি নোট এ ব্যবহার করা হয়েছে ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের বড় ব্যাটারি। এবং এতে থাকছে ৩৩ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং এর সাপোর্ট। আপনারা বক্সেই পেয়ে যাবেন এই চার্জার, আলাদা ভাবে কিনতে হবে না৷ ৩৩ ওয়াটের এই চার্জার দিয়ে মোবাইলটিকে ফুল চার্জ করতে প্রায় ১ ঘন্টার মত সময় লাগে৷
ফুল চার্জ করার পর আমরা নরমাল ব্যবহার করে প্রায় দেড় দিনের মত ব্যাক আপ পেয়েছি৷ আর একটানা হেভি ইউজ করে যেমন গেম খেলা, ভিডিও দেখা, অনেক বেশি মাল্টি টাস্কিং করে একটানা প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘন্টার মত চার্জ ব্যাকাপ পেয়েছি৷ এই ফোনের ব্যাটারি ব্যাক আপ নি:সন্দেহে আপনাকে খুশি রাখছে৷ এছাড়া কম ন্যানোমিটার এর প্রসেসর থাকায় এটি আরও ভালো ব্যাক আপ দেয় এবং ব্যাটারি পাওয়ার বার্ন করে৷
রেডমি নোট ১২ এর অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্য
১৷ এতে থাকলে ডুয়েল ন্যানো সিমের পাশাপাশি একটি মেমোরি কার্ড ব্যবহার করার সুবিধা
২৷ এতে পাবেন ডুয়েল ফোরজি সাপোর্ট৷
৩৷ ক্যামেরা টুএপিয়াই এনাবল পাবেন ফলে আপনি পরে চাইলে ম্যানুয়েল ক্যামেরা বা জিক্যাম ব্যবহার করতে পারেবেন৷
৪৷ অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড ১৩ এবং ইউআই হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে এমআই ইউআই ১৪৷
৫৷ স্টোরেজ হিসাবে পাবেন ইউএফএস ২.২ এর স্টোরেজ। ফলে ভালো স্পিডে আপনি ফাইল ট্রান্সফার করতে পারবেন৷ পাশাপাশি পারফরম্যান্স এও দ্রুতগতি খেয়াল করবেন৷
৬৷ এখানে আছে জাইরোস্কোপ সেন্সর। ফলে যারা গেমিং করেন তারা এক্সট্রা বেনিফিট পাবেন৷
৭৷ রেডমি নোট ১২ এ ফেস আনলক এর সুবিধাও থাকছে। যা দ্রুত গতিতে কাজ করে৷ তবে একদম ডার্ক পরিবেশে এটি কার্যকরী না৷
৮৷ ওয়াইফাই ২.৪ গিগা হার্জের পাশাপাশি পাবেন ৫ গিগা হার্জের সাপোর্ট।
রেডমি নোট ১২ যারা কিনবেন
রেডমি নোট ১২ এ চার্জিং ব্যাকাপ এক কথায় অসাধারণ। ৬ ন্যানোমিটার এর প্রসেসর এবং অ্যামোলেড ডিস্পেলে থাকায় অনেক লম্বা সময় পর্যন্ত ব্যাকাপ পাওয়া যায়৷ লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড এবং শাওমির লেটেস্ট ইউআই থাকায় মাল্টিটাস্কিং পার্ফরমেন্স খুব ভালো স্মুথ পেয়েছি৷ রেডমি নোট ১২ এর হেপটিক ফিডব্যাকও চমৎকার। এখানে খুব বেশি হিটিং ইস্যু নেই৷ একটানা গেম খেলতে এবং মোবাইল ডাটা বেশি সময় ব্যবহার করলে হালকা হিট হতে দেখা যায় তবে তা হিটিং ইস্যুর পর্যায়ে পরবে সেমনটা নয়৷
এছাড়া এই ফোনকে তারা চয়েজ করবেন যারা খুব বেশি গেমিং করেন না, করলেও হাল্কা বা আপনার কাছে গ্রাফিক্স অতটাও ম্যাটার করে না এবং আপনি টুকটাক ফটোগ্রাফি করেন, ভালো চার্জ ব্যাকাপ প্রয়োজন, দেখতে সুন্দর ও স্টাইলিশ হতে হবে, বেশি বেশি সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করেন এবং মুভি বা নাটক বেশি দেখেন তাদের জন্য এই বাজেটে এটি অন্যতম সেরা একটি ফোন।
রেডমি নোট ১২ যারা কিনবেন না
যারা গেমিং ছাড়া কিছুই বোঝেন না, খুব বেশি গেম খেলেন এবং ভালো গ্রাফিক্স সেটিং এ গেমের মজা পেতে চান তারা এই ফোন কিনবেন না৷ আপনার জন্য এই বাজেটেই বিভিন্ন কোম্পানির গেমিং ফোনও আছে৷ সেসব জানার জন্য আমাদের সাথেই থাকুক এবং নিয়মিত ভিজিট করুন। কমেন্ট করেও আপনার মতামত জানাতে পারেন৷
এছাড়াও এর আরো যেসব দূর্বলতা আছে:-
১৷ এখানে শুধু ১০৮০ পিক্সেলের ৩০ এফপিএসে ভিডিও শুট করা যায়। ৬০ এফপিএস তো সাপোর্ট করে না। এখানে 4k ভিডিও করার কোনো অপশন নেই৷
২৷ জিপিইউ অনেক বেশি আগের মডেলের হওয়াতে ছবির প্রসেসিং এ কিছুটা ঘাততি লক্ষ্যনীয়।
৩৷ এটি দেখতে প্রায় আগের নোট সিরিজের মডেল নোট ১১ এর মতই৷
৪৷ এর ব্যাক প্যানেলটি প্লাস্টিকের। প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করেও যখন প্লাস্টিকের ফোন কিনতে হয় তখন সত্যি আফসোস লাগে৷ এখানে গ্লাস দেওয়া উচিত ছিলো৷
সর্বোপরি, ২০০০০ টাকা বাজেটে এই ফোনখানা অনেকেই পছন্দ করবেন আবার অনেকেই অপছন্দ করতে পারেন৷ তবে আপনি যে ধরনের ইউজার অবশ্যই বুঝে শুনে ফোন কিনবেন৷ আপনার কষ্টের টাকা দিয়ে যদি এমন ফোন কিনেন যা আপনার সাথে যায় না, তাহলে কোনো ফায়দা নেই। আপনার ভালো লাগাকে সবার আগে প্রাধান্য দিবেন৷