আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। Infinix রিসেন্টলি বাজেট রেঞ্জে খুবই দারুন স্পেসিফিকেশন এর একটি নতুন স্মার্টফোন বাংলাদেশের মার্কেটে এনেছে। Infinix এর এই মডেলটির নাম hot 30।
আজকের এই আর্টিকেল এ এই মোবাইল ফোনের দাম কত , এখানে কি কি পাওয়া যাবে, দাম হিসেবে কেমন হবে ইত্যাদি জানতে পারবেন। তাই মনোযোগ দিয়ে আর্টিকেল টি পড়ুন।
infinix hot 30 এর দাম কত
infinix hot 30 বাংলাদেশের মার্কেটে দুইটি র্যাম ভ্যারিয়েন্ট এ পাওয়া যায়। এর ৪ জিবি র্যাম ও ১২৮ জিবি রম ভ্যারিয়েন্ট এর দাম ১৪,৯৯৯ টাকা। এবং ৮ জিবি র্যাম ও ১২৮ জিবি রম ভ্যারিয়েন্ট এর দাম ১৭,৪৯৯ টাকা।
Infinix hot 30 Full review in Bangla
আরও দেখুন
infinix hot 30 এর লুকিং কেমন
infinix hot 30 সর্বমোট ৩ টি কালারে বাজারে পাওয়া যায়। এর কালার ভ্যারিয়েন্ট এর নাম গুলো হলো যথাক্রমে Racing Black, Surfing Green ও Sonic White। প্রত্যেকটি কালারই অনেক আকর্ষণীয়।
এই মোবাইলের বক্সের মধ্যেই আপনারা পেয়ে যাবেন মোবাইলটির সাথে ৩৩ ওয়াট এর একটি চার্জার ,টাইপ সি চার্জিং ক্যাবল, একটি ব্যাক কভার, ইউজার ম্যানুয়াল এবং একটি সিম ট্রে ইজেক্টর পিন।
এর রেয়ার প্যানেলের দাগকাটা স্ট্রাকচার টি দেখতে খুবই সাইনি এবং এটি আলোকে রিফ্লেক্ট করে ফলে আরো বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়। রেয়ার প্যানেলটি প্লাস্টিকের তৈরি। এবং এর বডি ফ্রেম টিও প্লাস্টিকের তৈরি।
মোবাইলটির ডিসপ্লে প্রটেকশন হিসাবে কিছু নেই। তাই একটি ভালো দেখে স্ক্রিন প্রটেক্টর কিনে ব্যবহার করবেন। ডিসপ্লে তে আছে পাঞ্চ হোল কাট আউট এর ডিজাইন। মোবাইল ফোনটির ওজন ১৯৬ গ্রাম এবং এর থিকনেস ৮.৪ মিলিমিটার।
পিছনে আছে বড় বড় দুইটি ক্যামেরা বাম্প। এবং একটি ফ্ল্যাশ লাইট। মোবাইলটির নিচের দিকে আছে মেইন স্পিকার, প্রাইমারি মাইক্রোফোন, ইউএসবি টাইপ সি চার্জিং পোর্ট এবং ৩.৫ মিলিমিটার এর একটি হেডফোন জ্যাকের পোর্ট।
infinix hot 30 এর উপরের দিকে কিছুই নেই। বামে আছে একটি সিম কার্ড ট্রে এবং এখানে ২ টি সিম কার্ডের পাশাপাশি একটি এক্সটার্নাল মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।
ডান দিকে পাবেন একটি পাওয়ার বাটন এবং ভলিউম বাটন। পাওয়ার বাটন টিতে ব্যবহার করা হয়েছে একটি ফিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সর। এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর বেশ ফাস্ট এবং একুরেট কাজ করতে পারে। এবং এর পজিশন ঠিক জায়গায় আছে বলে মনে হয়েছে আমাদের কাছে।
infinix hot 30 এর ডিসপ্লে তে কি কি আছে
infinix hot 30 মোবাইলটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৬.৭৮ ইঞ্চি সাইজের বিশাল বড় একটি ডিসপ্লে। ডিসপ্লের রেজুলেশন ফুল এইচডি প্লাস।
এটি একটি আইপিএস এলসিডি প্যানেলের ডিসপ্লে। ডিসপ্লেটির পিক্সেল ডেনসিটি ৩৯৬ পিপিআই। এছাড়াও এখানে আছে ৯০ হার্জ রিফ্রেশ রেট এর সাপোর্ট।
এখানে প্রায় ৬০০ নিটস পর্যন্ত পিক ব্রাইটনেস থাকাতে সরাসরি সূর্যের আলোতে ব্যবহার করতে গিয়েও তেমন একটা সমস্যা হয়নি। ডিসপ্লেটির চিন এবং বেজেলের পরিমাণ দাম অনুযায়ী ভালোই লাগবে।
এটি একটি আইপিএস ডিসপ্লে হওয়াতে প্রায় ন্যাচারাল কালার প্রোভাইড করে। ডিসপ্লেটি অনেক বড় হওয়ায় এতে ভিডিও দেখে এবং গেমিং করে অনেক মজা লাগবে।
infinix hot 30 এর ক্যামেরা কেমন
infinix hot 30 মোবাইল ফোনের ব্যাক প্যানেলে ব্যবহার করা হয়েছে ডুয়েল ক্যামেরা সেট আপ। এবং এখানে মেইন ক্যামেরাটি ৫০ মেগাপিক্সেলের। এই মেইন ক্যামেরার অ্যাপাচার f 1.6 । অন্য ক্যামেরাটি একটি এআই লেন্স।
দিনের আলোতে মেইন ক্যামেরার ছবিগুলো মোটামুটি ভালোই শার্পনেস এবং ডিটেইল ধরে রাখতে পারে। তবে ছবিগুলোকে অভার স্যাচুরেটেড মনে হয়। কখনও কখনও একটু ওয়াসড আউট বা ফ্যাকাসে লাগে।
তবে পোট্রেইট মোডে ছবি তোলার সময় খুব ভালোভাবেই ডায়নামিক রেঞ্জ ধরে রাখতে পারে৷ এছাড়াও কিনারার দিকগুলো খুব ভালোভাবে ডিটেক্ট করতে পারে। এই ক্যামেরাটির অ্যাপচার কম হওয়ায় রাতের বেলাতে তুলনামূলকভাবে ভালো ছবি পাওয়া যায়৷
মোবাইলটির সামনে ব্যবহার করা হয়েছে ৮ মেগাপিক্সেলের একটি সেলফি শুটার৷ এই ক্যামেরাটির অ্যাপাচার f ২.৫৷ সেলফি গুলো কিছুটা লাল রঙে আসে৷ তবে এখানেও পেছনের মত ডায়নামিক রেঞ্জ ভালোমতো ধরে রাখতে পারে৷
ছবিগুলো একটু কম ভাইব্রেন্ট এবং অনেকটা সোশাল মিডিয়া রেডি টাইপের ছবি। এই মোবাইলের সেলফির পারফরম্যান্স আশা করছি অনেকের কাছে ভালো লাগবে৷
মোবাইলটির ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করা যাবে সর্বোচ্চ 2k ৩০ এফপিএস দিয়ে৷ এবং সামনের ক্যামেরা দিয়ে ১০৮০ পিক্সেলের ৩০ fps এর ভিডিও করা যায়৷ ভিডিওতে কোন রকমের ইআইএস না থাকলেও অতটাও শেকি শেকি ফিল আসতেছিল না। তাই কাজ চালানোর মতো ভিডিও কোয়ালিটি পাবেন এই মোবাইলটি থেকে৷
infinix hot 30 এর পারফরমেন্স কেমন
infinix hot 30 মোবাইল ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ১৩ অপারেটিং সিস্টেম৷ এবং এখানে সফটওয়্যার হিসেবে পাবেন এর নিজস্ব কাস্টম ইউআই xos 12.6। প্রসেসর হিসেবে মোবাইলটিতে ব্যবহার করা হয়েছে MediaTek Helio G88।
এটি একটি অক্টোকরের প্রসেসর৷ এবং এর ট্রানজিস্টর সাইজ ১২ ন্যানোমিটার৷ এটি সর্বোচ্চ 2.0 গিগা হার্জ স্পিডে কাজ করতে পারে৷ এখানে জিপিইউ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে Mali-G52 MC2।
মোবাইলটি দিয়ে আমরা দৈনন্দিন সকল কাজকর্মে কোন রকমের কোন সমস্যা পাইনি৷ মাল্টি টাস্কিং করার সময় এটি খুব ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। এছাড়াও এখানে ২৭০ হার্জ টাচ স্যাম্পলিং রেট থাকায় এখানে খুব স্মুথ পারফরম্যান্স পেয়েছি।
গেমিং এর ক্ষেত্রে ছোটখাটো সকল গেম কোন সমস্যা ছাড়াই খেলতে পারবেন উরাধুরা। পাবজি খেলার সময় আমরা এখানে সর্বোচ্চ গ্রাফিক্স দিতে পেরেছি এইচ ডি এবং এই গ্রাফিক্স দিয়ে ফ্রেম রেট পেয়েছি হাই বা 30 fps। গ্রাফিক্স কমিয়ে নিলে ফ্রেম রেট আলট্রা পর্যন্ত পাওয়া যায় বা ৪০এফপিএস পর্যন্ত।
পারফরম্যান্স মোটামুটি স্টাবল এবং প্লে এবল পেয়েছি। পাবজি খেলে সকলেরই আশা করি মোবাইল ফোনটি ভালো লাগবে। তবে যখন একটানা আপনি অনেকক্ষণ ধরে গেম খেলবেন তখন মোবাইল ফোনটি একটু গরম হয়। গরম হওয়ার পর এখানে ল্যাগ লক্ষ্য করা যায়।
ফ্রি ফায়ার গেমটি আমরা আল্ট্রা গ্রাফিক্স দিয়ে ৬০ এম পি এস বা হাই ফ্রেম রেট দিয়ে খেলতে পেরেছি। শ্যাডো অফ করে ফেলেছি এবং পারফরম্যান্স খুব চমৎকার পেয়েছি। ফ্রী ফায়ার খেলার সময় এই মোবাইলের পারফরম্যান্স আপনাকে সন্তুষ্ট রাখবে।
কল অফ ডিউটি কম গ্রাফিক্স সেটিং দিয়ে খুব ভালোভাবে খেলা যায়। এখানে খুব বেশি গ্রাফিক্স সাপোর্ট করে না। কল অফ ডিউটিতে এর পারফরমেন্স অনেক বেশি মনোমুগ্ধকর। এই গেমটি এছাড়া অনেক বেশি অপটিমাইজড হওয়াতে আরো বেশি ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া দিয়েছে।
infinix hot 30 এর ব্যাটারি কত
ইনফিনিক্স এর এই মডেলের মোবাইলটিতে ব্যবহার করা হয়েছে পাঁচ হাজার মিলি এমপিয়ার এর বড় ব্যাটারি। এবং চার্জার হিসেবে পাবেন ৩৩ ওয়াটের একটি ফাস্ট চার্জার।
এই ফার্স্ট চার্জারটি দিয়ে মোবাইল ফোনটিকে শূন্য থেকে ১০০% পর্যন্ত চার্জ করতে সময় লাগে প্রায় এক ঘন্টা পাঁচ থেকে দশ মিনিট। একবার ফুল চার্জ করার পরে মোবাইলটি প্রায় দেড় দিনের মত সাধারণ ব্যবহার করা যায়।
অন্যদিকে হেবি ইউজ করে অর্থাৎ একটানা গেম খেলে, মুভি দেখে এবং হেভি মাল্টি টাস্কিং করে ব্যাটারির ব্যাকআপ পাওয়া যায় প্রায় ছয় ঘন্টার কাছাকাছি। মোবাইল টিতে তেমন ব্যাকগ্রাউন্ড ড্রেইনিং এর দেখা পাওয়া যায়নি।
infinix hot 30 এর অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্য
১। এখানে ডুয়েল ফোরজি সাপোর্ট আছে।
২। ইনফিনিক্স এর এই স্মার্টফোনটিতে ওয়াইফাই ২ এবং ওয়াইফাই ৫ গিগা হার্জ উভয়টি সাপোর্ট করে।
৩। এই মোবাইলটির ডিসপ্লে তে ওয়াইড ভাইন এল ওয়ান এর সাপোর্ট করে। ফলে বিভিন্ন ওটিটি প্লাটফর্মে আপনারা ফুল এইচডি তে ভিডিও দেখতে পারবেন।
৪। এই মোবাইলটিতে আপনারা সর্বোচ্চ ৮ জিবি পর্যন্ত ভার্চুয়াল র্যাম ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন।
৫। এখানে সর্বোচ্চ ৫১২ জিবি পর্যন্ত এক্সটার্নাল মেমোরি কার্ড সাপোর্ট করে।
৬। ইনফিনিক্স এর মোবাইল গুলোতে সাধারণত ক্যামেরা টু এপিআই এর প্রপার সাপোর্ট থাকে না। এই মোবাইলটিতেও এর ব্যতিক্রম করা হয়নি। এজন্য আপনি এখানে কোন ম্যানুয়াল ক্যামেরা অর্থাৎ জি-ক্যাম ব্যবহার করতে পারবেন না।
৭। এখানে একটি সিঙ্গেল স্পিকার ব্যবহার করা হয়েছে এবং এই স্পিকারটির পারফরম্যান্স ফুল ভলিউম এ কোন রকমের ডিসটরসন পাওয়া যায়নি কিন্তু সাউন্ড কিছুটা কম মনে হয়েছে অন্যান্য অনেকগুলো ফোন থেকে।
infinix hot 30 কেনো কিনবেন
বাংলাদেশের মার্কেটে অফিসিয়াল ভাবেই ১৫ হাজার টাকা প্রাইজে এই মোবাইলটি অন্যতম একটি সেরা মোবাইল। ১৫ হাজার টাকায় এটি যা কিছু অফার করছে অন্যান্য ব্র্যান্ড গুলিতে অনেক দিক দিয়ে কমতি রয়েছে। এখানে একটি ফুল এইচডি ডিসপ্লে পাচ্ছেন, সুন্দর ডিজাইন , পাঞ্চহোল ক্যামেরা কাট আউট, ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ, ফাস্ট চার্জার এর সাপোর্ট, বাজেট অনুযায়ী ভালো পারফরম্যান্স এইসব বিষয় পাচ্ছেন।
যারা একটু মোটামুটি মানের গেমিং করার পাশাপাশি, টুকটাক ফটোগ্রাফি করেন এবং ভালো মানের ব্যাটারি ব্যাকআপ চান, পাশাপাশি তাড়াতাড়ি চার্জ হবার জন্য ফাস্ট চার্জার এবং বড় ডিসপ্লে কে পছন্দ করেন তারা এই মোবাইলটিকে অবশ্যই পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। হতে পারে এটি আপনাদের জন্য 15000 টাকা বাজেট রেঞ্জে একটি আদর্শ মোবাইল ফোন।
infinix hot 30 কেনো কিনবেন না
ইনফিনিক্স এর পক্ষ থেকে এই মোবাইলটিতে সবথেকে বড় কমতি বলে মনে হয়েছে এখানে কোন ধরনের সেকেন্ডারি নয়েজ ক্যান্সলেশন এর জন্য কোন রকমের মাইক্রোফোন না থাকা।
এর ব্যাক প্যানেল্টিতে অনেক বেশি ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর দাগ পড়ে ফলে এখানে একটা ভালো মানের ব্যাক কভার ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে।
মোবাইলটিতে অনেক বড় ডিসপ্লে থাকায় যারা ছোট এবং কম্প্যাক্ট ফোন পছন্দ করেন তাদের এক হাতে ব্যবহার করতে সমস্যা হতে পারে।
ইনফিনিক্স এর ইউআইটি তে বেশ কিছু প্রি ইন্সটলড অ্যাপ থাকে। অনেকেই এগুলো পছন্দ করেন না। আবার এক্সওএস এ খুব বেশি আপডেটও নাকি আসে না এমন অভিযোগ অনেকেই করেন।
মোটকথা, ইনফিনিক্স এর ইউ আই কে অনেকেই পছন্দ করে না। এজন্য ইনফিনিক্স এর ইউআইটি যদি আরেকটু হালকা হত তাহলে হয়তো অনেকেই পছন্দ করত।
সর্বশেষ মন্তব্য
ইনফিনিক্স হট ৩০ মোবাইলটি আপনি কিনবেন কিনা তা জানার জন্য পুনরায় পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন। এরপর মার্কেটে গিয়ে দেখবেন আপনার থেকে পছন্দ হয় কিনা।
আমাদের ১৫০০০ টাকা বাজেটে আরো কিছু ফোন সম্পর্কে আর্টিকেল লেখা আছে চাইলে সেগুলো পড়তে পারেন। এই ধরনের আর্টিকেল নিয়মিত পাওয়ার জন্য আমাদেরকে ভিজিট করুন।