samsung a54 price in bangladesh | samsung a54 review |
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আশা করি সকলেই ভাল আছেন। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু হলো স্যামসাংয়ের নতুন একটি লঞ্চ হওয়া মোবাইল ফোন নিয়ে। এই মডেলটির নাম samsung a54 ।
samsung a54 মডেলের মোবাইলটির দাম কত ,এটি দাম হিসেবে কেমন হবে, এখানে স্পেসিফিকেশন হিসেবে কি কি পাবেন ইত্যাদি আলোচনা করা হবে আজকের এই পোস্টে। তাই মোবাইলটি কেনার আগেই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। তাহলে আশা করা যায় আপনার কেনার সিদ্ধান্তটি সঠিক হবে।
samsung a54 এর দাম কত টাকা
samsung a54 বাংলাদেশের মার্কেটে দুইটি ভেরিয়েন্টে পাওয়া যায়। ৮ জিবি র্যাম ও ১২৮ জিবি রম এর দাম অফিসিয়াল ভাবে ৬৩,৯৯৯ টাকায় ও আন অফিসিয়াল ভাবে ৩৬ থেকে ৩৭ হাজার টাকাই এবং ৮ জিবি র্যাম ও ২৫৬ জিবি রম এর দাম আন অফিসিয়াল ভাবে ৪০ হাজার টাকার আশেপাশে।
আন অফিসিয়াল ভাবে বিভিন্ন দোকানে বিভিন্ন রকমের দাম হতে পারে। এটা উঠা নামা করে তাই ভালোভাবে যোগাযোগ করে দেখবেন দাম কত টাকা। এটি একদম নির্দিষ্ট নয়।
samsung a54 এর ডিজাইন কিরকম
samsung a54 মোবাইল ফোনটির পিছনে এবং সামনে দুই জায়গাতেই ব্যবহার করা হয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস ফাইভ এর প্রটেকশন। মোবাইলটির থিকনেস হল ৮.২ মিলিমিটার এবং এর ওজন প্রায় ২০২ গ্রাম।
মোবাইলটির সাইজ স্ট্যান্ডার্ড হওয়াতে এক হাতে খুব ভালোভাবেই ব্যবহার করা যায়। এই মোবাইল ফোনটি সব মিলিয়ে চারটি বিভিন্ন কালারের পাওয়া যাবে। কালার গুলোর নাম হল যথাক্রমে Lime, Graphite, Violet, White।
এই মোবাইলটি ডান পাশে আপনারা পাবেন ভলিউম বাটন এবং পাওয়ার বাটন। বাম পাশে কিছুই নেই। উপরের দিকে রয়েছে একটি সিম কার্ড ট্রে এবং সেকেন্ডারি নয়েস ক্যান্সলেশন মাইক। সিম কার্ড ট্রেতে আপনারা সর্বোচ্চ একটি সিমের পাশাপাশি একটি মেমোরি কার্ড অথবা অন্য একটি সিম ব্যবহার করতে পারবেন অর্থাৎ এটি একটি হাইব্রিড স্লট।
মোবাইলটির নিচের দিকে পাবেন প্রাইমারি স্পিকার টাইপ সি ইউ এস বি চার্জিং পোর্ট এবং প্রাইমারি মাইক্রোফোন। মোবাইলটির ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর পজিশন সুবিধামতো জায়গাতেই রয়েছে। ফিঙ্গার টাচ করার সাথে সাথেই মোবাইলটি আনলক হয়ে যায় তবে সামান্য এনিমেশন ডিলের কারণে একটু একটু স্লো মনে হতে পারে।
samsung a54 এর ডিসপ্লে তে কি কি আছে
samsung a54 মডেলের মোবাইলটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৬.৪ ইঞ্চি সাইজের একটি স্ট্যান্ডার্ড ডিসপ্লে এবং এই ডিসপ্লেটির রেজুলেশন হলো ফুল এইচডি প্লাস। এতে ব্যবহার করা হয়েছে সুপার অ্যামোলেড প্যানেল। এখানে HRD 10 এর সাপোর্ট আছে।
ডিসপ্লেটির পিক্সেল ডেনসিটি ৪০৩ পিপিআই। এছাড়াও ডিসপ্লে দিতে ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেট সাপোর্ট করে। ডিসপ্লেটির ব্রাইটনেস আউটডোর কন্ডিশনে বেশ ভালোভাবেই ইউজ করার মত। কোন ধরনের কোন প্যারা খেতে হবে না। মোবাইলটির চিন এবং বেজেল এরিয়া দাম হিসেবে ঠিকঠাকই রয়েছে।
samsung a54 এর ক্যামেরা কোয়ালিটি কেমন
samsung a54 এ ব্যবহার করা হয়েছে তিনটি ক্যামেরা। মেইন ক্যামেরাটির রেজুলেশন ৫০ মেগাপিক্সেলের। মেইন ক্যামেরাটির অ্যাপাচার ১.৮। মেইন ক্যামেরার সেন্সলেটি সনি আইএমএক্স ৭৬৬।
আরেকটি ক্যামেরা হল ১২ মেগাপিক্সেলের টু পয়েন্ট টু অ্যাপাচারের একটি আলট্রা ওয়াইড ক্যামেরা। এই সেন্সর টি হলো স্যামসাং আইসোসেল এর এল সিক্স সেন্সর। এবং সর্বশেষ ক্যামেরাটি হল 2.4 অ্যাপাচারের একটি ম্যাক্রো ক্যামেরা।
মেইন ক্যামেরার ছবিগুলো ফোকাস খুব ভালোভাবেই করা যায়। ফোকাস নিয়ে কোন সমস্যায় পড়তে হয় না। ছবিগুলো খুবই কালারফুল এবং খুবই ভালো মতো ডিটেলস ধরে রাখতে পারে। ছবিগুলোর কালার টোন খুবই চমৎকার। কখনো কখনো কিছু কিছু ছবিতে অতিরিক্ত এক্সপোসিং খেয়াল করা যায় এতে করে অবশ্য দেখতে ভালই লাগে লাল কালার টি সামান্য বুষ্ট হয়।
ছবির ডায়নামিক রেঞ্জ ঠিকঠাক মতোই কভার করতে পারে। অন্যান্য ক্যামেরার ছবিগুলো ভালো ছিল। পিছনের ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও রেকর্ড করা যায় সর্বোচ্চ 4k রেজুলেশনে। ক্যামেরাতে ওআইএস সাপোর্ট থাকাতে ভিডিও কোয়ালিটি খুব ভালো স্ট্রাবালাইজ হয়।
ভিডিও শুটিং এর ক্ষেত্রে এটি ওয়ান অফ দা বেস্ট দাম অনুযায়ী। মোবাইলটির সামনে রয়েছে ২.২ অ্যাপাচারের একটি ৩২ মেগাপিক্সেলের সেলফি শুটার। সেলফি ক্যামেরাটি ও এই মোবাইলের দাম অনুযায়ী চ্যাম্পিয়ন লেভেল এর ছবি তুলতে পারে।
সেলফির ডায়নামিক রেঞ্জ ভালোভাবে ধরে রাখতে পারে পাশাপাশি পোর্ট্রেট শট তোলার সময় এজ খুব ভালোভাবে ডিটেক্ট করতে পারে। কালার বুস্টিং করে ফলে ছবিগুলো অনেক এট্রাক্টিভ মনে হয়।
samsung a54 এর পারফরমেন্স কেমন
samsung a54 মোবাইলটিতে এন্ড্রয়েড সফটওয়্যার হিসেবে রয়েছে লেটেস্ট এন্ড্রয়েড ১৩। এবং এখানে ইউআই হিসেবে আছে samsung এর ইউ আই ওয়ান ইউ আই ৫.১। প্রসেসর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে Exynos 1380।
এই প্রসেসরের ব্যবহার করা হয়েছে আটটি কোর। প্রসেসরটি সর্বোচ্চ গতি ২.৪ গীগা হার্জ। এবং এই প্রসেসর টি ট্রানজিস্টার সাইজ মাত্র 5 ন্যানোমিটার। জি পি ইউ হিসেবে এখানে রয়েছে Mali-G68 MP5।
samsung a54 এর রেগুলার পারফরম্যান্স খুবই ভালো পাবেন। স্যামসাং এর ইউ আই খুব অপটিমাইজ হওয়াতে এখানে কোনো মেজর বাগস পাবেন না। সব ধরনের গেম খেলতে পারবেন। পারফরমেন্স ওকে লেভেলের পাবেন। খুব বেশি গেমিং করলে মোবাইলটি গরম হয় দ্রুত। তখন পারফরমেন্স ড্রপ করে।
এটা অবশ্য স্যামসাং এর এক্সিনস প্রসেসর এর বেশিরভাগ ডিভাইসের কমন ব্যাপার। গেম খেলে এনজয় করতে পারবেন খুব ভালো মানের ডিসপ্লে রয়েছে যেহেতু তবে অনেক গরম হলে একটু ঠাণ্ডা করার সময় দিয়ে আবার খেলতে পারেন এতে ফোনের আউটপুট আরো ভালো পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।
samsung a54 এর ব্যাটারি কত দেওয়া
samsung a54 মোবাইলটিতে ব্যাটারি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের বিশাল বড় একটি ব্যাটারি। ব্যাটারিটি একটি নন রিমুভেবল এবং লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি। সাথে রয়েছে ২৫ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট।
২৫ ওয়াটের আশেপাশের চার্জার দিয়ে চার্জ করলে মোবাইল ফোনটি ২ ঘণ্টার মধ্যে কিংবা সামান্য বেশি সময়ের মধ্যে অর্থাৎ দুই ঘন্টার আশেপাশে ফুল চার্জ করে ফেলতে পারে। ফুল চার্জ করার পর প্রায় দেড় দিনের মতো ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায় নরমাল ইউজ করে এবং হেভি ইউজ করে প্রায় ছয় ঘন্টার মত ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায়।
samsung a54 এর অন্যান্য কিছু দিক
১। বক্স কন্টেন্ট হিসেবে আপনারা পাবেন মোবাইল ফোনটির পাশাপাশি একটি সিম কার্ড ইজেক্টর পিন, ইউজার ম্যানুয়ালস এবং একটি টাইপ সি ইউ এস বি চার্জিং ক্যাবল।
২। মোবাইলটি স্পিকার পারফরমেন্স সাউন্ড মোটামুটি ব্যালেন্স দিতে পারে। এছাড়া এর বেইস ঠিকঠাক রয়েছে। স্পিকারটি যথেষ্ট ভালো লাগবে সকলের এর সুন্দর সাউন্ড কোয়ালিটির জন্য।
৩। samsung a54 তে ওয়াইড ভাইন এল ১ এর সাপোর্ট রয়েছে এর ফলে আপনারা এখানে বিভিন্ন ও
টিটি প্লাটফর্মে চাইলে ফুল এইচডি ভিডিও স্ট্রিম করতে পারবেন।
৪। এটি একটি ৫জি মোবাইল ফোন এবং এখানে ডুয়েল ব্যান্ড ওয়াইফাই অর্থাৎ সিঙ্গেল ব্যান্ড টু গিগাহার্জ এবং ডুয়েল ব্যান্ড ফাইভ গিগা হার্জ সাপোর্ট করে।
৫। samsung a54 তে আইপি ৬৭ এর রেটিং রয়েছে। তাই যেকোনো ধরনের ধুলাবালি এবং টুকটাক পানিতে পড়লেও খুব বেশি ক্ষতি করবে না। তবে ফোনে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পানিতে না ফেলাই ভালো।
৬। গেম খেলার জন্য এখানে জাইরোস্কোপ সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে যা গেমার ভাইদেরকে খুব ভালোমতো সাপোর্ট দিতে পারবে।
৭। এখানে স্টোরেজ হিসেবে ইউএফএস ২.২ ক্যাটাগরি স্টোরেজ থাকায় ডাটা ট্রান্সফার করার সময় ভালো রকমের স্পিড পাবেন। যদিওবা দামি ফোন এটি তাই আরো বেশি ফাস্ট স্টোরেজ থাকলে ভালো হতো।
samsung a54 যারা কিনতে পারেন
ক্যামেরা সেন্ট্রিক ফোন হিসাবে যদি এই ফোনটিকে আপনারা চিন্তা করেন তাহলে এটি এক কথায় পারফেক্ট ফোন ৪০ হাজার টাকার মধ্যে। ফোনটির ডিজাইন অনেক সুন্দর। এর ডিস্পেলটি খুব ভালো মানের। খুব ভালো কালার প্রোডাকশন করতে পারে।
পাশাপাশি ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেট দিয়ে খুব স্মুথ চলে। এখানে মাল্টি টাস্কিং খুব ভালোভাবে করা যায়। ব্যাটারি ব্যাকআপ স্যামসাং এর A সিরিজের ফোনগুলো থেকে বেশি ভালো। এসমস্ত দিক থেকে samsung a54 কেনা যেতে পারে।
samsung a54 যারা কেনার আগে সতর্ক থাকবেন
samsung a54 এর ভালো দিকের পাশাপাশি কিছু খারাপ রয়েছে। যেমন এখানে ৩.৫ মিলিমিটারের কোন হেডফোন জ্যাকের পোর্ট নেই। অনেকেই হয়তোবা এর জন্য মোবাইলটি কিনতে চাইবে না।
samsung a54 এর আরেকটি অসুবিধা এটির হিটিং ইস্যু। ফোনটি তুলনমূলকভাবে বেশি তাড়াতাড়ি হিট হয় অন্যান্য এই দামের ফোনগুলো থেকে। কেও যদি শুধু গেমিং সেন্ট্রিক ফোন খুঁজে থাকেন , তাহলে আপনি অন্য ফোন নিলেই ভালো হবে। এখানে বক্সের সাথেই একটা আরো বেশি ওয়াট এর ফাস্ট চার্জার থাকা উচিত ছিল। অনেক দাম দিয়েই যেহেতু কেনা হচ্ছে ।
এর অফিসিয়াল দাম অনেক বেশি মনে হচ্ছে আন অফিসিয়াল দামের দিক বিবেচনায়। অফিসিয়াল দাম দিয়ে কেনাটা এই দামে বেশি খরচ করা হয়ে যায়। আপনি ওই দামে আরো অনেক ব্র্যান্ডের এর থেকেও বেশি ভালো স্পেসিফিকেশন এর স্মার্ট ফোন পাবেন।
সর্বশেষ বক্তব্য
সম্পূর্ণ পোষ্টটি পড়ার পর আশা করছি আপনাদের Samsung a54 কেনার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। এখানে সকল তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে তাই কোনো ভুল ত্রুটি থাকলে আমাদেরকে জানান।
পোস্টির মাধ্যমে কোনো দিক দিয়ে উপকার হলে আমদেরকে উৎসাহ দিন। এই রকম আরো লেখা নিয়মিত পেতে আমাদের নিয়মিত ভিজিট করুন।
সর্বোপরি, যেই ফোন কিনেন না কেনো আগে নিজে বাজারে গিয়ে ডেমো একটি মডেল হতে নিয়ে দেখবেন আপনার আসলে ফোনটিকে ভালো লাগছে কিনা এবং আপনার যে প্রয়োজন গুলো আছে সেইগুলো পূরণ করতে পারছে কিনা। পছন্দ হলে এবং আপনার প্রয়োজন পূরণ করতে পারলেই কিনে নিতে পারেন।